বিস্তারিত

কার গীবত করেন; কেন করেন? জেনে নিন:

মাওলানা মুফতী আব্দুল আহাদ 25 জুন

গীবত জঘণ্য গুনাহ ও মারাত্মক অপরাধ। যার গীবত করা হয়েছে তার কাছে ক্ষমা চাওয়া ছাড়া এ গুনাহ মাফের কোন উপায় নেই।

গুণী না হয়েও গুণের দাবী করা ও বর্ণনা যেমন ইসলাম সমর্থন করে না, ঠিক ক্ষেত্র বিশেষে দোষ গোপন করার অনুমতিও ইসলাম দেয় না। তাই দোষ ও গুণ বর্ণনার কঠোর নীতি রয়েছে ইসলামে।

তাই ইসলামের সোনালী যুগ থেকেই (الجرح والتعديل) জরাহ-তা'দীল তথা

দোষ-গুণ চর্চার একটা সাধারণ নিয়ম চলে আসছে । সে নিয়ম মেনে যদি কেউ কারো দোষ চর্চা করে তাহলে তা নিষিদ্ধ গীবতের অন্তর্ভুক্ত হবে না বরং তা হবে শরীয়ত সম্মত । তাই কখনও কখনও দোষ-গুণ চর্চা করা অপরিহার্য হয়ে পরে, যা না করলেই নয়। কারণ ক্ষেত্র বিশেষ গীবতের মধ্যেই থেকে থাকে জাতির কল্যাণ।

তাই মুহাদ্দিসীনেকেরামগণ ও ফুকাহায়েকেরামগণ বৈধ গীবতের সীমা-রেখা বেঁধে দিয়েছেন যা আমাদের অবশ্যই জানা দরকার। নিম্নে তার আলোচনা তুলে ধরা হল:

القدح ليس بغيبة في ستة متظلم ومعرف ومحذر

ولمجاهر فسقا ومستفت ومن طلب إلاعانة في إزالة منكر.

১. নির্যাতিত ও অত্যাচারিত ব্যক্তি এমন ব্যক্তির কাছে গিয়ে যালিমের দোষ চর্চা করতে পারবে, যে ন্যায় বিচারের মাধ্যমে তাকে যুলুম থেকে মুক্তি দেয়ার ক্ষমতা রাখে।

২. কোন ব্যক্তির পরিচয় দেওয়ার জন্য দোষ বর্ণনায় বাধা নেই। যেমন কোন ব্যক্তি মন্দ খেতাব দ্বারা সুপরিচিত ; যেমন খোঁড়া, কালা, অন্ধ, ট্যারা ইত্যাদি। তখন তার পরিচয় দেয়ার লক্ষ্যে উক্ত খেতাবগুলি উল্লেখ করা বৈধ। তবে অবমাননা বা হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য করার অনুমতি নেই।

৩. কুচক্রী ও কুকর্মকারীদের অনিষ্ঠ থেকে বাঁচার জন্য তাদের সম্পর্কে সাধারণ মুসলমানদের অবহিত করা দোষের কিছু নয়।

৪. প্রকাশ্যভাবে যারা পাপাচার-মন্দকাজ ও বিদআতে লিপ্ত। এমন ব্যক্তির দ্বারা যেম সাধারণ মুসমানগণের দ্বীন-ঈমানের ক্ষতি না হয়, সে জন্য তাদের পরিচয় তুলে ধরতে কোন ক্ষতি নেই।

তবে উদ্দেশ্য একমাত্র এটাই হতে হবে; অন্যথা তা হারাম হবে।

৫. ফতোয়া জানার জন্য মুফতি সাহেবের কাছে অবস্থার বর্ণনা দেয়ার ক্ষেত্রে দোষ চর্চা দোষের কিছু নয়। তবে ব্যক্তির নাম না বলে যদি উদ্দেশ্য পূরণ হয়, তাহলে নাম না নেয়াই ভালো।

৬.মন্দ কাজের অপসারণ ও পাপীকে সঠিক

পথ ধরানোর জন্য এমন ব্যক্তি বা সংস্থার কাছে তার দোষ তুলে ধরা, যারা তাকে শোধরাতে পারে।

আন্তরিকতার এবং বিশুদ্ধ নিয়তে সাথেই কেবল শরীয়ত এ দোষ চর্চার অনুমতি দেয়, অন্যথায় নয়।

সঙ্গত কারণেই একটি বিষয় সামনে এসে যায় তা হচ্ছে,

দারুল উলূম হাটহাজারীর এহতেমামীকে সামনে রেখে যারা বিভিন্ন ব্যক্তি সম্পর্কে কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু করেছেন এবং সমালোচনার ঝড় তুলেছেন তাদের স্মরণ রাখা দরকার যেন তারা এ ক্ষেত্রে শরীয়তের সীমানা পেরিয়ে না যায়। সীমানা পেরিয়ে কাজ করলে লাভের থেকে ক্ষতি বেশী হয়। আমাদের স্মরণ রাখতে হবে আমরা কিন্তু মুসলমান! বিধর্মীদের সভ্যতার রশি যেন আমাদের গলায় না উঠে।

যারা এ পথে পা বারিয়েছেন তাদের জন্য দুটি কথা:

ক. উপরে উল্লিখিত বিষয়গুলো সামনে রাখুন।

খ.গঠন মূলক সমালোচনা করুন অর্থাৎ, নির্ভরযোগ্য তথ্যের দ্বারা তাত্বিক আলোচনা করুন। যেন আপনার সমালোচনা ভবিষ্যতে ইতিহাসের পাতায় স্থান পায়। এবং জড়িত ব্যক্তিদের মনে আল্লাহর ভয় পয়দা হয়।

(গ) নিজের পূর্ণ পরিচয় দিন।

(ঘ) পারলে বইয়েন রূপ দিয়ে সবার সামনে পৌঁছে দিন। যাতে এমন গর্হিত কাজে আর কেউ পা বারানোর সাহস না পায়।

যদি এমনটি করতে না পারেন, তাহলে চোরের মত লুকায় লুকায় মুখ রুচক গীবতের দ্বারা মাঠ গরম করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ গীবতের দ্বারা শয়তান খুশী হয় এবং ফেতনার দ্বার উন্মুক্ত হয়।

স্মরণ রাখতে হবে, এক ফেতনা যেন আরেক ফেতনার উপলক্ষ্য না হয়।

জানি সবারই যুক্তি আছে, তবে যুক্তিতে মুক্তি নেই, মুক্তি রয়েছে শরীয়ত মানার মধ্যে।

হে আল্লাহ! শরীয়ত যে দোষ চর্চার অনুমতি দেয় না, তা থেকে আমাদের হেফাজত কর। আর যে দোষ-গুণ চর্চার অনুমতি দেয় তা করার তাওফীক নসীব কর। আমীন

দারুল উলূম হাটহাজারীর ইহতিমামের আসন!

.....................................................

দারুল উলূম হাটহাজারীর মুহতামিম কে হবেন? তা নির্ণয় হয় শুরার মাধ্যমে। গতকাল সেই শুরার বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের পর থেকে পক্ষপাতিত্ব নিয়ে শুরু হয় ঢিল ছুড়াছুঁড়ি। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, রাজনৈতিক কোন দলের পদের রদবদল ঘটতে যাচ্ছে, আর সে পদের পক্ষগ্রহণ নিয়ে যেন দুটি শক্তি নোংড়া বাক-বিতণ্ডায় লিপ্ত হয়েছে। বড় দুঃখের বিষয়! আমাদের মস্তিষ্ক এভাবে বিগড়ে যাবে তা আগে কখনও ভাবি নি!

আমরা এমন হলাম কেন?

আমাদের স্মরণ রাখা উচিৎ যে, এ প্রতিষ্ঠানের শুরু লঘ্ন থেকে শেষ রাতে আল্লাহর কিছু প্রিয় বান্দাদের চোখের পানি ঝরেছে। এটি একটি মাকবুল প্রতিষ্ঠান।

আমার শায়খ আল্লামা মুফতী সাঈদ আহমদ রহ. বলতেন "মাকবুল প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব কোন অযোগ্যের হাতে গেলে, আল্লাহ তাকে যোগ্য বানিয়ে দেন"।

আল্লামা রুমী রহ. কত সুন্দর কথা বলেছেন:

داد او را قابلیت شرط نیست * بلکہ شرط قابلیت داد اوست

তাঁর ফজল ও করমের জন্য যোগ্যতার দরকার নেই,

বরং তাঁর ফজল ও করমই মানুষকে যোগ্য বানিয়ে দেয়। আমার বিশ্বাস হাটহাজারীর মত মাকবুল একটি দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব কখনো অযোগ্যদের হাতে যাবে না, আর কেউ এ নিয়ে টানাটানি করলে টিকে থাকতে পারবে না। আল্লাহ তাদের বেইজ্জতী করবেন এ জন্য আমাদের মিছিল-মিটংয়ের দরকার হবে না।

আজকের শায়খুল ইসলাম ( আল্লামা আহমদ শফী সাহেব দাঃ বাঃ) যখন দারুল উলূমের দায়িত্ব নেন তখন দারুল উলূমে অনেক বড় বড় ব্যক্তি ছিলেন যাদের শান ও মান কোন অংশে কম ছিলো না। তখনকার অবস্থাটা নিয়ে আমাদের একটু ভাবা দরকার!

এমন অতীত থেকে তো আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিৎ।

আল্লাহ না করুক; বর্তমান শুরাগণ যদি যোগ্য ব্যক্তি নির্ণয়ে অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষম নাও হন! এবং দায়িত্ব যদি অযোগ্যের হাতেই চলে যায়, তাহলে আমাদের উচিৎ হবে আল্লাহ তাআলার দরবারে দোয়া করা।

হে আল্লাহ! দারুল উলূমের ইহতিমামের আসনে যাকে তুমি বসিয়েছো তাকে এ মাকামের যোগ্য বানিয়ে দাও, তোমার প্রিয় বান্দা হিসেবে কবুল করে নাও।

গীবত-শেকায়েতের পথ পরিহার করে আমাদের মনে হয় এ পথেই পা বাড়ানো দরকার। তাতে শত্রুদের হাসাহাসির পথটা কমছে কম রুদ্ধ হয়ে যাবে এবং নিজেদের মধ্যে হৃদ্যতা বৃদ্ধি পাবে।

হে আল্লাহ! দ্বীনের সকল মারকাযগুলোকে আপনার প্রিয় বান্দারের দ্বারা পরিচালিত করুন। আমিন।

 


প্রসঙ্গ: প্রবন্ধ মন্তব্য: 0


আপনার মন্তব্য লিখুন


Graveter Image

নাম

April 12