বিস্তারিত

কুরবানীর গোশতের সামাজিক বন্টন ও আহকাম:

মাওলানা মুফতী আব্দুল আহাদ 14 জুলাই

সমস্ত মুসলিম কুরবানীর দিনগুলোতে মহান আল্লাহ তা‘আলার মেহমান। আর আল্লাহ তা‘আলার যিয়াফত ও আতিথেয়তা গ্রহণ করার মধ্যেই রয়েছে বান্দার কল্যাণ।

মহান আল্লাহ তা‘আলা কুরবানীর দিনগুলোতে তাঁর নিবেদিত পশুর গোশত মুসলিমদের জন্য অবারিত করে দিয়েছেন, যাতে তারা তা খেয়ে তাঁর শুকর আদায় করতে পারে।

কাজেই কুরবানীর গোশত খাওয়া উদরপূর্তিমাত্র নয়; বরং এটি একটি উঁচু মানের এবাদত ও এতে রয়েছে ত্যাগের অমিয় শিক্ষা। কুরবানীর দিন কুরবানীদাতারা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে তাঁর যিয়াফতের প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন। তাই যারা কুরবানী দেয়ার সামর্থ রাখে না তাদের মেহমানদারীর দায়িত্ব কুরবানীদাতাদের জিম্মায়। এজন্য কুরবানীর দিন গরীব ও অভাবগ্রস্তদের মাঝে কুরবানীর গোশত বিতরণ; এটা গরীরদের প্রতি করুণা নয়; বরং কুরবানীদাতারা যেন এটা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে  যিয়াফতের প্রতিনিধিত্ব করছেন। কুরবানীদাতারা মেহমানদারীর দায়িত্ব গ্রহণ করার কারণে তার গোশতকে ভাগ করা মুস্তাহাব করে দেওয়া হয়েছে।

তাই; কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতেই কুরবানীর গোশত তিন ভাগে ভাগ করা মুস্তাহাব।

১.এক ভাগ নিজের জন্য

২.এক ভাগ বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনদের জন্য

৩.ও এক ভাগ গরীব ও অভাবগ্রস্তদের বাড়িতে গুরুত্বের সঙ্গে পৌঁছে দেওয়ার জন্য।

সাথে মনে ভয় রাখতে হবে যে, পাছে তার কোন ত্রুটির কারণে এ বিতরণ আল্লাহর কাছে অপছন্দ না হয়ে যায়। এ মর্মে

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন:

فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْبَائِسَ الْفَقِيرَ

অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং দুঃস্থ-অভাব গ্রস্থকে আহার করাও।( সুরা হাজ্জ্ব ২২:২৮ )

অন্য এক আয়াতে ইরশাদ করেন-

فَكُلُوْا مِنْهَا وَاَطْعِمُوا الْقَانِعَ وَ الْمُعْتَرَّ، كَذٰلِكَ سَخَّرْنٰهَا لَكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ.

তখন তার গোশত থেকে নিজেরাও খাও এবং ধৈর্যশীল অভাবগ্রস্তকেও খাওয়াও এবং তাকেও, যে নিজ অভাব প্রকাশ করে। এভাবেই আমি এসব পশুকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।(সূরা হজ্ব ১৩৬)

আর হাদীস শরীফে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

كُلُوْا وَادّخِرُوْا وَتَصَدّقُوْا.  

তোমরা খাও, জমা করে রাখ এবং দান-খয়রাত কর। ( বুখারী, মুসলিম)

সুনানে কুবরা বায়হাকীতে সহীহ সনদে বর্ণিত আছে

وروينا عن علقمة قال : بعث معي عبد الله بن مسعود بهدي تطوعا  فقال لي : كل أنت وأصحابك ثلثا  وتصدق بثلث وابعث إلى أهل أخي عتبة ثلثا۔

আলক্বামা রহ. হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. আমাকে নফল হাদী অর্থাৎ নফল কুরবানীর গোশত  দিয়ে পাঠালেন এবং বললেন-তুমি এবং তোমার সঙ্গীরা এক তৃতীয়াংশ খাবে, এক তৃতীয়াংশ ছদকা করবে এবং এক তৃতীয়াংশ আমার ভাই উতবার পরিবারের কাছে পৌঁছাবে। কোন কোন বর্ণনায় ‘উতবার’ রা. জায়গায় আবু ‘সুফিয়ান’ রা. এর নাম এসেছে। (বায়হাকী-৫/৩৯৫; তাবারানী কাবীর-৯/৩৯৯;)

المجلي الاضاحي এর ৬ষ্ঠ খন্ডে এ হাদীসটি  বর্ণিত আছে-

وقال ابن مسعود: أمرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم أن نأكل منها ثلثاً، ونتصدق بثلثها، ونطعم الجيران ثلثها، وهذا الحديث ضعَّفه ابن حزم، وقال يأكل منها، ويتصدق بما شاء، ويباح له أن يطعم منها الغني والكافر، وأن يهدي منها إن شاء، وعن أبي سعيد أنه كان يقول لبنيه: إذا ذبحتم أضاحيكم فأطعموا وكلوا وتصدَّقوا، وصفوة القول: أن يأكل منها ويهدي ويتصدق.

 হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিত আছে  রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে আদেশ করেছেন আমরা যেন কুরবানীরএক তৃতীয়াংশ খাই, এক তৃতীয়াংশ সদকা করি এবং এক তৃতীয়াংশ প্রতিবেশীকে খাওয়াই। অনুরূপ হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. তাঁর ছেলেদের বলতেন: তোমাদের পশু জবেহ হয়ে গেলে নিজেরা খাবে, অন্যদের খাওয়াবে এবং সদকা করবে। পরিস্কার কথা হচ্ছে; নিজেরা খাবে, হাদীয়া দেবে এবং সদকা করবে। (হাদীসটি যয়ীফ)

অন্য এক হাদীসে রসূল সা. বলেন:

إذا ضحى أحدكم فليأكل من أضحيته ويطعم منه غيره

তোমরা কুরবানী করলে তোমরাও খাবে এবং অন্যদের খাওয়াবে।

(মুসনাদে আহমদ)

আল্লামা হাইছামী রহ. বলেন: হাদীসটি বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত।(মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৪/২৫)

কুরবানীর গোশত সঞ্চয় করে রাখা:

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তোমরা খাও, সংরক্ষণ করে রাখ এবং দান কর”।[ মুসলিম]

কুরবানীর পশুর যে অংশটুকু খাওয়া জায়েয সে অংশটুকু সংরক্ষণ করে রাখাও জায়েয; এমন কি সেটা দীর্ঘ দিন পর্যন্ত হলেও ।

কিন্তু যদি দুর্ভিক্ষের বছর হয় তাহলে তিনদিনের বেশি সংরক্ষণ করা জায়েয নয়।

দলিল হচ্ছে- সালামা বিন আকওয়া (রাঃ) এর হাদিস তিনি বলেন,

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কুরবানী করেছে তৃতীয় রাত্রির পরের ভোর বেলায় তার ঘরে যেন এর কোন অংশ অবশিষ্ট না থাকে”। পরের বছর সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করল: ওগো আল্লাহর হাবীব! আমরা কি গত বছরের মত করব? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “তোমরা খাও, খাওয়াও এবং সংরক্ষণ কর। ঐ বছর মানুষ কষ্টে ছিল। তাই আমি চেয়েছি তোমরা তাদেরকে সহযোগিতা কর”(সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম)

কুরবানির গোশত কতটুকু খাওয়া যাবে, কতটুকু হাদিয়া দেওয়া হবে এবং কতটুকু সদকা করা হবে এ ব্যাপারে আলেমগণ মতভেদ করেছেন।

 এ ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য অভিমত হচ্ছে- এক তৃতীয়াংশ খাওয়া, এক তৃতীয়াংশ আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশীকে হাদিয়া দেওয়া এবং এক তৃতীয়াংশ সদকা করা।

ফাতাওয়ায়ে তাতার খানিয়াতে ২৭৭৫৩ নং মাসআলাতে বর্ণিত আছে

و في السراجي: الافضل ان يتصدق بثلث الاضحية ويتخذ الثلث ضيافة الاقارب  والجيران وىدخر الثلث الباقي وان لم يتصدق بشيئ فلا بعث و في الكافي يستحب ان لا تنقص الصدقة من ثلث.

সিরাজী কিতাবে বর্ণিত আছে উত্তম হচ্ছে এক তৃতীয়াংশ ছদকা করা, এক তৃতীয়াংশ আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীদের খাওয়ানো এবং এক তৃতীয়াংশ নিজে খাওয়া বা সঞ্চয় করে রাখা যদি সদকা না করে তাতেও কোন সমস্যা নেই।

কাফী কিতাবে বর্ণিত আছে- মুস্তাহাব হচ্ছে সদকা যেন এক তৃতীয়াংশের কম না হয়।

অবশ্য যার পরিবারে সদস্যসংখ্যা বেশি সে পুরো গোশতও যদি নিজে রেখে দেয় তাতেও কোনো অসুবিধা নেই। তবে মনে রাখতে হবে যে, কুরবানী আখেরাতের জন্য সঞ্চয় ,তাই নিজের চেয়ে অন্যকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

দেশে দুর্ভিক্ষের অবস্থা বিরাজ করলে কুরবানীর গোশত  তিন দিনের বেশি খাওয়া যাবে না বা সঞ্চয় করা যাবে না।

গরীব ও অভাবগ্রস্তদের ভাগ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে এবাদত:

আমাদের স্মরণ রাখতে হবে যে, কুরবানীর গোশতের ভাগ ও বিতরণ হচ্ছে এবাদত। গরীব ও অভাবগ্রস্তদের কুরবানীর গোশত  দেওয়াকে তাদের প্রতি করুণা মনে করাটা বিরাট বড় ভুল। কারণ এবাদতকে করুণা মনে করা বড় অপরাধ।

ভিক্ষাবৃত্তি ইসলামী শিক্ষার পরিপন্থি:

আমাদের সমাজে ভিক্ষাবৃত্তি ও মওসুমী হাত পাতার ব্যাপারটা একটা রেওয়াজে পরিণত হয়ে গেছে। কুরবানীর দিন কিছু পেশাদার ভিক্ষুককেও দেখা যায় যারা মানুষের বাড়ি বাড়ি  ভিড় জমায়। আবার এদের সাথে কিছু সমাজের গরীব কর্মজীবি মানুষও মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে দাঁড়ায়। কুরবানীদাতা চিনতে না পারার কারণে প্রকৃত গরীব ও কর্মজীবিরা অনেক সময় বঞ্চিত হয়ে যায়।

আমাদের স্মরণ রাখতে হবে যে, কুরবানীর গোশত বিতরণ একটি ইবাদত, তাই এ এবাদতকে কিছুতেই ভিক্ষাদানের মত বানানো যাবে না। আর এর গ্রহণও ভিক্ষাগ্রহণের মত হওয়া উচিত নয়। ভিক্ষাকে পেশা বানানো ইসলামী শিক্ষার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

ভিক্ষাবৃত্তির শিক্ষা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের  দেননি। তিনি বরং সাহাবায়ে কেরামদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি  নিয়েছেন যেন তারা কখনও কারও কাছে হাত না পাতেন। বৃদ্ধ বয়সে উটের পিঠে থাকা অবস্থায় হাত থেকে লাঠিটি পড়ে গেলে তাও তুলে দেওয়ার জন্য কাউকে অনুরোধ করেননি।

এর দ্বারা এ কথা বোঝানো উদ্দেশ্য নয় যে, যারা দুয়ারে দুয়ারে হাত পেতে বেড়ায় তাদেরকে কুরবানীর গোশত দেওয়া যাবে না, বা দেওয়া জায়েয হবে না; বরং তাদেরকেও কুরবানীর গোশত দেওয়া জায়েয; তবে তা হতে হবে ন¤্রতা ও মমতার সাথে। শরীয়তের চিরাচরিত নিয়ম মতেই আমাদের এবাদত করতে হবে। এবাদতের ক্ষেত্রে আমাদের স্বাধীনচেতা মনোভাব পরিহার করতে হবে।

প্রচলিত সামাজিক প্রথায় গোশত বিতরণ জায়েজ কিনা?

আমাদের দেশে বিভিন্ন স্থানে কুরবানীর গোশত  বন্টনের বিভিন্ন পদ্ধতি লক্ষ্য করা যায়। কেউ কেউ তার কুরবানীকৃত পশুর গোশত স্বাধীনভাবে নিজে নিজেই বন্টন করে থাকেন। আবার কেউ কেউ সমাজের মাধ্যমে গোশত  বিলিয়ে থাকেন।

গ্রাম এলাকাতে সমাজপ্রথা ব্যাপকভাবে চালু রয়েছে। একটি গ্রামে ৪/৫ টি বা তার বেশী সমাজ দেখা যায়। এসব সমাজে অধিক প্রচলিত নিয়ম এই যেÑ

সমাজের সদস্যদের মধ্যে যারা কুরবানী দিয়ে থাকেন তারা এক তৃতীয়াংশ গোশত  সমাজের কোন এক প্রধানের বাড়িতে পৌঁছে দেন। এভাবে সমাজের সকল কুরবানীদাতাদের এক তৃতীয়াংশ গোশত  একত্রিত হয়। অতঃপর সমাজে যতটি ঘর আছে ততটি ভাগকরে ঐ গোশত  প্রত্যেক ঘরে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়। এ নিয়মে সমাজের প্রত্যেক সদস্য গোশত পেয়ে যায়। ফলে পরিবার নিয়ে ২/১ দিন কিছু গোশত খেতে পারে।  যারা এ প্রথার উপর আপত্তি করেন তাদের আপত্তিসমূহ নীচে তুলে ধরা হলো:

প্রথম আপত্তি- কুরবানীর গোশতের এক তৃতীয়াংশ দান করা মুস্তাহাব আর এ সম্বোধনটি প্রত্যেক কুরবানীদাতাকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে; সমাজ নেতাদেরকে বলা হয়নি। তাই কুরবানীদাতা নিজেই কুরবানীর গোশতের বণ্টন করবে-এটাই হাদীসের মর্ম। আর আমরা জানি কুরবানীর গোশত বিতরণ মুস্তাহাব আর মুস্তাহাবের বিষয়ে কাউকে জোরাজুরি করা যাবে না।
দ্বিতীয় আপত্তি- সামাজিক প্রথায় সমস্যা হলো- সমাজ প্রধানগণ জোরপূর্বক মানুষের কাছ থেকে কুরবানীর গোশতের এক তৃতীয়াংশ বা অর্ধেক জমা দেয়ার নিয়ম বেঁধে দেয়। অথচ সদকা ও দান আল্লাহর উদ্দেশ্যে খাঁটি মনে স্বেচ্ছায় না দিলে কবুল হয় না। অনুরূপ কারও কাছ থেকে কোনো কিছু জোরপূর্বক নেওয়া এবং তা দান করাও নিষেধ। এতে সদকা কারীর ইখলাস ও আন্তরিকতা থাকে না বরং থাকে সামাজিকতার অবৈধ চাপ।
আর মুসলমানের মাল তার সন্তুষ্টি ছাড়া গ্রহণ করা হালাল নয়। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
لا يحل مال امرئ مسلم إلا بطيب نفس منه. حديث صحيح أخرجه أحمد والبيهقي والدارقطني
কোনো মুসলমানের মাল তার সন্তুষ্টি ছাড়া গ্রহণ করা হালাল নয় (মুসনাদে আহমদ, বায়হাকী, দারা কুতনী)
এ হাদীসের ভিত্তিতেই অনেকে সামাজিক এ কর্মকান্ডকে হারাম বলে থাকেন। সমাজ প্রধানরা যদি জোর-জবরদস্তী করে নেয় তাহলে অবশ্যই এটা হবে শরীয়ত পরিপন্থি একটি কাজ যা পরিহার করা অপরিহার্য।

 

তৃতীয় আপত্তি- সমাজে যে এক তৃতীয়াংশ দান করা হয় তা শুধু মাত্র গরীবদের মাঝে দেওয়া হয়না বরং ধনী গরীব নির্বিশেষ সকলকে দেওয়া হয়। এমনকি যে কুরবানী দিয়েছে তাকেও  গরীবের সমান ভাগ দেওয়া হয়।

আবার দান করে দান ফেরত নেওয়া বমি করে বমি গিলে ফেলার মত। হাদীস শরীফে এসেছে-

لا تعد فی صدقتک فان العائد فی صدقتہ کالعائد فی قیئہ ۔ ( متفق علیہ)

 তুমি  তোমার সদকা ফিরিয়ে নিয়ো না। কেননা, যে আপন সদকা ফেরত নেয় সে যেন আপন বমি পুনরায় খায়। (বোখারী ও মুসলিম)

কেননা যারা সমাজে গোশত  দেয় তারা আবার সমাজ থেকে সে গোশতের ভাগ নেয়। বিধায় তারা সেই কাজই করে যা করতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন।

চতুর্থ আপত্তি- সমাজে কেউ কেউ মান্নতের কুরবানী করে । এই গোশত  কোনক্রমেই ধনীর জন্য জায়েজ নয়।
পঞ্চম আপত্তি- এই প্রথার কারণে অন্য এলাকার গরীবরা কিছুই পায় না।
ষষ্ঠ অপত্তি হচ্ছে: সমাজের পক্ষ থেকে যারা খাসি কুরবানী দেয় তাদেরকে গরুর গোশত দেওয়া হয় আর যারা গরু কুরবানী দেয় তাদেরকে খাসির গোশত দেওয়া হয়। যেহেতু গোশতের বদলায় গোশত দেয়া-নেয়া হয় বিধায় এটা  সুদের অন্তর্ভুক্ত। তাই সামাজিক  এ প্রথা কখনও বৈধ হতে পারে না! এসব কারণে অনেক মুফতি সাহেবগণ সামাজিক প্রথাকে নাজায়েজ বলেন।
সামাজিক প্রথা জায়েজ হওয়ার ছুরত:

ইসলামের সোনালী যুগ থেকেই সামাজিক কর্মকান্ডগুলো সুনিপুণ ভাবে পরিচালিত করার জন্য সমাজ প্রধানদের দায়িত্ব দেয়া হত। খোদ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও ক্বওমের সরদারদের নিজ ক্বওমের কাজের দায়িত্ব দিতেন। সহজ ও সুন্দর ভাবে কাজ পরিচালনা করাই ছিল এর একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

বিধায় সমাজের দ্বারা যদি কোন কাজ সুন্দর ভাবে সমাধান করা যায় তাহলে সেই চিরাচরিত সুন্দর সমাজ ব্যাবস্থাকে হারাম বলার কোন যৌক্তিকতা থাকে না।

উল্লেখিত আপত্তি ও যুক্তি থাকা সত্বেও কিছু শর্ত সাপেক্ষে অনেক মুফতি সাহেবগণ সমাজ প্রথাকে জায়েজ বলে থাকেন। এবং উল্লিখিত আপত্তির জবাবে তারা বলেন-

প্রথম আপত্তির জবাবে বলা হয় যে- যদিও কুরবানীর গোস্তের ১/৩ অংশ দান করা মুস্তাহাব এবং মুস্তাহাবের বিষয়ে কাউকে জোরাজুরি করা যায়না,তথাপি কুরবানীর আসল উদ্দেশ্যও কিন্তু শুধু নিজে গোশত  খাওয়া নয়। শুধু নিজে গোশত  খাওয়ার নিয়তে কেহ কুরবানী করলে আদৌ তা কবুল হবে না। কুরবানীর দিন  ও তার পর তিন দিন মোট ৪ দিন রোজা রাখা ধনী গরীব সবার জন্য হারাম। কেননা আল্লাহ পাক এ চার দিন সকল মুমিন বান্দাকে গোশত খাওয়ার দাওয়াত দিয়েছেন।

বর্তমানে মানুষের মধ্যে আতœচিন্তা প্রবল হয়েছে। তা ছাড়া ফ্রিজ আসার কারণে সারা বছর সঞ্চয় করার প্রবণতা অনেক বেড়েছে। গরু/ছাগলের গোশতের দামও অনেক বেশী। তাই অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যেখানে সমাজ ব্যবস্থা নেই সেখানে গরীবরা গোশত  তেমন পায়না।

কুরবানীর সৌন্দর্য হচ্ছে সবাইকে নিয়ে খাওয়া। যেমন অনেক আয়াতে ও হাদিছে এই আদেশের বর্ণনা এসেছে  যা উপরে বর্ণনা করা হয়েছে।

 সমাজ প্রথার মাধ্যমে অনেকের ঘরে একটি পর্যাপ্ত পরিমান গোশত  সহজে পৌঁছে যায়। ফলে পরিবার নিয়ে সকলে ২/১ দিন কিছু গোশত   খেতে পারে। এই প্রথা কুরবানীর আসল উদ্দেশ্য অর্থাৎ ব্যাপক যিয়াফত বা সকলকে গোশত খাওয়ানোকে সহজ করে দেয়।

দ্বিতীয় আপত্তির জবাবে বলা হয় যে- সমাজ প্রধানরা যদি জোর-জবরদস্তী করে নেয় তাহলে আবশ্য এটা হবে শরীয়ত পরিপন্থি একটি কাজ; যা পরিহার করা অপরিহার্য। 

কিন্তু কিছু সমাজ প্রধানদের মূর্খতার কারণে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার এ সুন্দর ব্যাবস্থাপনাকে পরিহার করার কোন প্রয়োজন হয় না। কারণ সামাজের বহুমুখী কাজগুলো সমাজের দ্বারা সুন্দর ভাবে পরিচালিত হওয়ার বিষয়টা সেই সোনালী যুগ থেকেই চলে আসছে। আর মানুষ গরীব হলেই তার আত্মমর্যাবোধ ও নীতি নৈতিকতা বিক্রি করে দেয় না। তাই অনেকেই লজ্জায় তাদের ভাগ নিতে সমাজ প্রধানদের দ্বারস্থ হয় না। তাই তারা তাদের মনের কষ্ট মনেই চাপা দিয়ে রাখেন।

এ জন্য যাদের কুরবানী করার সামর্থ নেই? এবং এমন গরীব ঘরের সংখ্যা কত? তাদের একটা লিস্ট তৈরী করে সবার ঘরে এ পরিমাণ গোশত পৌঁছে দেয়া; যাতে পরিবার নিয়ে সকলে ২/১ দিন কিছু গোশত  খেতে পারে; আর এ মহৎ কাজটা সমাজের দ্বারা সুন্দরভাবে পরিচালিত করা সম্ভব।

আবার আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষও পাওয়া যাবে যারা শুধু দুই ঈদেই বাড়িতে আসেন। নিজ গ্রামের ক‘জন গরীব ও অভাবগ্রস্তদের সাথে তাদের চেনা-জানা আছে? এখন তার বাড়িতে যদি থানার সব মানুষই গিয়ে ভিড় জমায় তাহলে সে কয়জনকেই বা দিবে; আর কতটুকু করেই বা দিবে? গরীব কর্মজীবি মানুষের পাশাপাশি পেশাদার ভিক্ষুকও ভিড় জমায়। আবার কুরবানীদাতা চিনতে না পারার কারণে নিজ মহল্লার প্রকৃত গরীব ও কর্মজীবিরা বঞ্চিত হয়। তাই লিস্ট তৈরী করে সবার ঘরে গোশত পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমেই এ মহান এবাদত পূর্ণতায় পৌঁছে। বিধায় এ প্রথা ভালো কাজের প্রথ দেখায়, আর ভালো কাজে একজন অপরজনকে সাহায্য করার নির্দেশ কুরআন ও সুন্নাহয় রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন:

 وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ ۚ

 

সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সাহায্য করো না। (সুরা মায়েদা-আয়াত;২)

হাদীস শরীফে এসেছে:

তুমি কোন ভাল কাজকে তুচ্ছ মনে কর না। (মুসলীম )

অপর এক বর্ণনায় এসেছে-যে ব্যক্তি কোন সৎ কর্মের পথ পদর্শন করে তার জন্য উক্ত কর্ম সম্পাদনকারীর সমপরিমাণ ছওয়াব রয়েছে। (মুসলীম )

মূলত কুরবানী হলো আত্মত্যাগ, সহমর্মিতা ও সৌহার্দ্যতার নাম। কারণ কুরবানী ত্যাগরে অমিয় শিক্ষা নিয়েই উপস্থিত হয়। আর সামাজিক প্রথা কুরবানীর আসল উদ্দেশ্য অর্থাৎ ব্যাপক যিয়াফত বা সকলকে গোশত  খাওয়ানোকে সহজ করে দেয়।

 

তৃতীয় আপত্তির জবাবে বলা হয় যে- অন্যান্য দান ছদকা আর কুরবানীর গোশত  এক নয়। ধনীরা যাকাত,ছদকা-ফেতরা খেতে পারে না,কিন্তু কুরবানীর গোশত ধনীরা নিজে খেতে পারে অন্য কোন ধনী আতœীয়,প্রতিবেশী বা বন্ধুকেও খাওয়াতে পারে।

অতএব সমাজে গরীবের সাথে ধনীরাও যে গোশত  পায় তা বমির মত নয়। তবে এ ক্ষেত্রে উত্তম হচ্ছে সমাজে যারা কুরবানী দিয়েছে তারা যেন কোন ভাগ না নেন। যদি নিয়েও থাকেন তবে তিনি যেন সমাজ ছাড়াও অন্যান্য গরীবকে আরও কিছু গোশত দান করেন যেন ছদকার অংশ ১/৩ এর কম না হয়।

নফল দান-সদকার ক্ষেত্রে শরীয়তের নীতি হচ্ছে:

وصدقة التطوع لا تلزم إلا بالقبض

অর্থাৎ দাতা দেয়ার পরে গ্রহিতা সেই দান গ্রহণ করলে তখন সে দান ফেরত নেয়া শরীয়তে হারাম। গ্রহিতা যতক্ষণ দান গ্রহণ করবে না ততক্ষণ সেটা দাতার সম্পদ বলেই গণ্য হবে।

أما بعد قبضها بنفسه أو عن طريق وكيل  فلا يجوز الرجوع فيها باتفاق أهل العلم رحمهم الله

হাঁ! তবে যে কোন পন্থায় দান যদি গ্রহিতার হাতে পৌঁছে যায় তখন তা ফেরত নিতে পারে না। আর হাদীসে যে নিষেধ করা হয়েছে তা গ্রহিতা গ্রহণ করার পরে ফেরত নিতে নিষেধ করা হয়েছে। সঙ্গত কারণেই আমাদের জানা দরকার যে, স্বত্বাধিকার বা মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় কখন?

নিম্নে বর্ণিত যে কোন একটার মাধ্যমেই স্বত্বাধিকার বা মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়।

১. ক্রয়ের মাধ্যমে।

২. দান সূত্রে।

৩. ওসিয়ত করার দ্বারা।

৪. কোন মুবাহ জিনিসের উপর নিজের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করে নেয়ার মাধ্যমে। যেমন কোন পরিত্যক্ত পানি ও ঘাসের উপর টাকা -পয়সা খরচ করে তা উপযোগী করে তার মালিক হওয়া।

৫. মিরাছ সূত্রে।

৬. দিয়াতের দ্বারা।

(দিয়াত: মানুষ হত্যার ক্ষেত্রে আদালতের মাধ্যমে পক্ষবৃন্দের আপোষ-রফার ভিত্তিতে যে অর্থ প্রদান করা হয় তা হল দিয়াত।

এই শাস্তি কেবলমাত্র তখনই প্রযোজ্য হবে যখন হত্যাকৃত ব্যক্তির পরিবারের লোকেরা তা দাবী করবে।

এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেন: অতঃপর তার ভাইয়ের তরফ থেকে যদি কাউকে কিছুটা মাফ করে দেয়াহয়,তবে প্রচলিত নিয়মের অনুসরণ করবে এবং ভালভাবে তাকে তা প্রদান করতে হবে । এটা তোমাদের পালনকর্তার তরফ থেকে সহজ এবং বিশেষ অনুগ্রহ। এরপরও যে ব্যাক্তি বাড়াবাড়ি করে, তার জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।

 [বাকারাঃ১৭৮]

(কিতাবুল উসূল)

কুরবানীর গোশত সমাজে জমা হলেই গরীবরা মালিক হয় না। বরং গরীব ব্যক্তিকে দান করার পর সে গ্রহণ করলেই কেবলমাত্র সেই গোশতের মালিক হবে। আর গোশতটা যতক্ষণ সমাজে থাকবে ততক্ষণ কুরবানী দাতার গোশত  বলেই গণ্য হবে।

 আর নফল দান সদকা ধনী-গরীব সবাই খেতে পারে। ধনীরা শুধু মানত ও যাকাতের অর্থ খেতে পারে না।

تحل صدقة التطوع للأغنياء بلا خلاف ، فيجوز دفعها إليهم ويثاب دافعها عليها , ولكن المحتاج أفضل

আল্লাম নববী রহ. বলেন: নফল সদকা ধনীদের দেওয়া জায়েয এতে কারো দ্বিমত নেই এবং ধনীদের দিলে ছাওয়াবও পাওয়া যাবে।  কিন্তু ধনীদের দেওয়া থেকে গরীরদের দেওয়াই উত্তম।(আল-মাজমু ৬/২৩৬)

বিধায় সমাজে জমা হওয়া গোশত  গরীবদের দেওয়ার পরে বেঁচে গেলে কুরবানীদাতারা তা গ্রহণ করতে পারবে।

 

চতুর্থ পত্তি জবাবে বলা হয় যে- সমাজে কেউ কেউ মানতের কুরবানী করে । এই গোশত কোনক্রমেই ধনীর জন্য জায়েজ নয়। হ্যাঁ; এটা সত্য। তাই মানতের কোরবানীর গোশত  আলাদা রাখতে হবে এবং তা শুধুমাত্র সমাজের ঐসব সদস্যদেরকে দিতে হবে যারা সদকা খাওয়ার যোগ্য।
পঞ্চম আপত্তির জবাবে বলা হয় যে-

ক. সব এলাকাতেই সুন্দর সমাজ ব্যাবস্থা গড়ে তোলা এবং গরীবদেরকেও সমাজভুক্ত করা।

খ. প্রত্যেক সমাজের মানুষেরা  নজর রাখবেন আশে পাশে কারা সমাজের বাইরে আছেন। এসব লোকেরা আমাদের গোষ্ঠী বা সমাজের না হলেও আমাদের  দ্বীনী ভাই। অতএব খোঁজ নিয়ে তাদেরকেও গোশত  পৌঁছাবেন।

ষষ্ঠ আপত্তির জবাবে বলা হয় যে-

ইসলামী শরীয়াহ মতে সুদ হচ্ছে:

১.লেনদেনের ক্ষেত্রে চুক্তির শর্তানুযায়ী শরীয়াহ সম্মত কোনোরূপ বিনিময় ব্যতীত মূলধনের উপর অতিরিক্ত যা কিছু গ্রহণ করা হয় তাকে সুদ বলে। অথবা

২.ঋণ দিয়ে মূলধনের অতিরিক্ত নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করাকে সুদ বলে।

সুদের সংজ্ঞা থেকেই বোঝা যায় যে, তা লেনদেনের (বেচা-কেনা) ক্ষেত্রে এবং তা  চুক্তির শর্তানুযায়ী হয়ে থাকে। সামাজিক ভাবে একজন গরুর গোশত অন্য জন খাসির যে গোশত পেয়ে থাকে তা তো লেনদেন ও চুক্তি ভিত্তিক হয়ে থাকে না। এখানে মূল লক্ষ্য হাদীয়াই হয়ে থাকে। বিধায় এটাকে কখনও সুদ বলা যায় না। ফুকাহায়েকেরামগণ এমন হাদীয়ার আদান প্রদানকে সুদ বলে উল্লেখ করেন নি-

قال وإذا قال الموهوب له للواهب خذ هذا عوضاً عن هبتك أو بدلاً عنها أو في مقابلتها فقبضه الواهب سقط الرجوع لحصول المقصود(البنایۃ)

যাকে হাদিয়া দেয়া হলো সে যদি হাদিয়া দাতাকে তার বদলায় কিছু দেয় তাহলে তা গ্রহণ করা বৈধ। (বেনায়-৯/২৪০)

قال السرخسي في المبسوط: وسواء كان العوض شيئًا قليلًا, أو كثيرًا، من جنس الهبة, أو من غير جنسها; لأن هذه ليست بمعاوضة محضة, فلا يتحقق فيها الربا۔

হাদিায়াদাতাকে হাদিয়ার বদলায় যদি কম-বেশি কিছু দেওয়া হয় তাহলে এটা সুদ বলে গণ্য হয় না।( আল-মাবসূত-১১/৯১)

সামাজিক ভাগের গোশতের আদান প্রদানকে অযথা সুদ বলাটা অত্যুক্তি ছাড়া কিছু না।

উপসংহারে বলতে হচ্ছে-

১.মানব জাতির প্রথম কুরবানী আদম আ: এর দু সন্তান-হাবিল ও কাবিলের। হাবিলের কোরবানী কবূল হয়েছিল তার প্রমান হচ্ছে তা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছিল। হাবিল এক টুকরা গোশতও খাননি। পক্ষান্তরে আল্লাহপাক উম্মতী মোহাম্মাদীকে এক তৃতীয়াংশ গোশত খাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন এবং নিয়তের কারণে আমাদের কুরবানীর পশুর ওজন বরাবর ছাওয়াব দান করা হবে। অতএব এক তৃতীয়াংশ গোশত  খাবো এটাই কত সৌভাগ্য!

 সব গোশত যদি নিজে খাবার কৌশল করি; তাহলে কুরবানীর অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে আমরা ব্যর্থ হবো! কারণ কুরবানী ত্যাগের অমিয় শিক্ষা নিয়েই উপস্থিত হয়। আমাদের কুরবানী থেকে আত্মত্যাগ, সহমর্মিতা, ওসৌহার্দ্যতা ও যিয়াফতের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।

২.যেহেতু আমাদের উদ্দেশ্য সবাইকে নিয়ে খাওয়া ও আল্লাহর সন্তুষ্টি হাছিল করা, তাই প্রচলিত সমাজ প্রথা এ উদ্দেশ্যের সহায়ক।

বিধায় দু‘একজন মুর্খ সমাজ প্রধানদের কারণে সুন্দর একটা ব্যাবস্থাকে হারাম বলে চালিয়ে দেওয়া মোটেও সমীচীন নয়।

৩. সমাজের মাধ্যমে গোশত  বন্টনের সুন্দর ব্যাবস্থা এ মহান এবাদতকে পূর্ণতায় পৌঁছায়, কেননা

সমাজে গরীব ঘরের সংখ্যা কত? এবং যাদের কুরবানী করার সামর্থ নেই, তাদের একটা লিস্ট তৈরী করে এ পরিমাণ গোশত তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেয়া, যাতে কমছে কম ২/১ দিন ছেলে-মেয়েদের নিয়ে পেট ভরে খেতে পারে এ পরিমাণ দেয়ার চিন্তা ভাবনা করবে।

সমাজ প্রধানগণ সবার বাড়িতে বাড়িতে গোশত পৌঁছানোর ব্যাবস্থা করবেন। কারণ মানুষ গরীব হলেই সবাই আত্মমর্যাবোধ ও নীতি নৈতিকতা বিক্রি করে দেয় না। তাই অনেকেই লজ্জায় তাদের ভাগ নিতে সমাজ প্রধানদের দ্বারস্থ হয় না। তাই তারা তাদের মনের কষ্ট মনেই চাপা দিয়ে রাখে।

হে আল্লাহ! এই মহান এবাদত তোমার মর্জি মোতাবেক করার তাওফীক দান কর। আমীন।

 


প্রসঙ্গ: প্রবন্ধ মন্তব্য: 0


আপনার মন্তব্য লিখুন


Graveter Image

নাম

April 12