বিস্তারিত

ফরজ নামাজ বাদ সম্মিলিত দুআ কি বিদআত?

মাওলানা মুফতী আব্দুল আহাদ 23 অক্টবর

নামাজ,রোজা, হজ্ব ও যাকাত যেমন  ইসলামের স্বতন্ত্র একটি এবাদত ঠিক দুআও ইসলামের  স্বতন্ত্র একটি এবাদত। তাই দুআকে ভিন্ন কোন দৃষ্টিতে দেখার কোন সুযোগ নাই।

দুআ একটি সতন্ত্র এবাদত:

মুমিনের সব থেকে বড় হাতিয়ার হচ্ছে তার দুআ।

“দুআ মুমিনের হাতিয়ার” এটাকে আমরা অনেক সময় হাদীস মনে করে থাকি প্রকৃত পক্ষে এটি হাদীস নয়, তবে সহীহ হাদীসের অর্থ বাহক। অন্য এক হাদীসে এসেছে: সবর এবং দুআ মুমিনের কতইনা উত্তম হাতিয়ার।

 

تخريج السيوطي. فر.  عن ابن عباس . تحقيق الألباني. ضعيف  انظر حديث رقم : ৫৯৭০

মহান আল্লাহ তা‘আলা আদেশ করেছের তাঁর কাছে দুআ করার জন্য:

দুআর  মাধ্যমে মুমিন তার রবের সাথে যে কোন সময় সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে যে কোন বিপদাপদ ও মুসীবাতে। তাই আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:

وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ ۚ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ

১.তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব। যারা আমার এবাদতে অহংকার করে তারা সত্বরই জাহান্নামে  দাখিল হবে লাঞ্ছিত হয়ে। (সূরা-মুমিন; ৬০)

إِنَّهُمْ كَانُوا يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَيَدْعُونَنَا رَغَبًا وَرَهَبًا وَكَانُوا لَنَا خَاشِعِينَ

২.তাঁরা সৎকর্মে ঝাঁপিয়ে পড়ত, তাঁরা আশা ও ভীতিসহকারে আমাকে ডাকত এবং তাঁরা ছিল আমার কাছে বিনীত। (আম্বিয়া;৯০)

وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ

৩.আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে বস্তুতঃ আমি রয়েছি সন্নিকটে।

যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেই, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে। কাজেই আমার হুকুম মান্য করা এবং আমার প্রতি নিঃসংশয়ে বিশ্বাস করা তাদের একান্তকর্তব্য। যাতে তারা সৎপথে

আসতে পারে।(সূরা-বাকারা ১৮৬)

 আল্লামা ইবনে কাসির রহ. কাবে আহবার থেকে বর্ণনা করেন, পূর্ব যুগে কেবল পয়গম্ববরগণকেই বলা হত, “দুআ করুন আমি কবুল করবো।” আর এখন এই আদেশ সকলের জন্য ব্যাপক করে দেয়া হয়েছে এবং এটা উম্মতে  মুহাম্মাদীরই বৈশিষ্ট্য। ( ইবনে কাসীর)

 এ আয়াতের তাফসীরে নোমান ইবনে বশীর হতে বর্ণিত রেওআয়েতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

عن النعمان بن بشير، رضي الله عنه ، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم، قال:  إن الدعاء هو العبادة

) رواه أحمد والبخاري في الأدب المفرد(

অর্থাৎ, দোয়াই  এবাদত। অতঃপর তিনি আলোচ্য আয়াত তেলাওয়াত করেন। (ইবনে কাসীর)

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ভাষায় দুআর গুরত্ব:

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: الدُّعَاءُ مُخُّ العِبَادَةِ

১.হযরত আনাছ ইবনে মালিক রা. বলেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:দুআ এবাদতের মগজ। (তিরমিজী)

عن بن عمر رضي الله عنهما قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : الدعاء ينفع مما نزل ومما لم ينزل فعليكم عباد الله بالدعاء. رواه أيضا الترمذي والحاكم وصححه الحاكم وحسنه الألباني

২.হযরত ইবনে উমার  (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন: যা সংঘটিত হয়েছে এবং যা সংঘটিত হয়নি দুআ ঐ সব কিছুই জন্যই উপকৃত হবে। সুতরাং হে আল্লাহর বান্দাগণ ! তোমরা দুআর প্রতি যতœবান হও। (তিরমিযী)

عن عبد الله بن مسعود رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم سلوا الله من فضله فإن الله عز وجل يحب أن يسأل وأفضل العبادة انتظار الفرج

৩.হযরত ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত রসূল সা. এরশাদ করেছেন, তোমরা আল্লাহর নিকট অনুগ্রহ কামনা কর। কেননা আল্লাহ তাআলা তাঁর কাছে প্রার্থনা করাকে পছন্দ করেন। এবাদতের  (দুআর) সর্বোত্তম দিক হলো সচ্ছলতার অপেক্ষা করা। (তিরমিযী)

 عن أبي هريرة رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وآله وسلم : ليس شيء أكرم على الله من الدعاء .هذا حديث صحيح الإسناد

৪.হযরত আবু হুরায়রা  (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন: আল্লাহ তাআলার নিকট দুআ অপেক্ষা অধিক  মর্যাদাশীল আর কিছুই হতে পারে না। (তিরমিযী)

عن سلمان قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يرد القضاء إلا الدعاء ولا يزيد في العمر إلا البر قال أبو عيسى وفي الباب عن أبي أسيد وهذا حديث حسن غريب

৫.হযরত সালমান (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন: দুআ ব্যতীত কোন কিছুই তাকদীরের লিখন পরিবর্তন করতে পারে না। এবং দুআ ব্যতীত কোন কিছুই মানুষের বয়স বৃদ্ধি করতে পারে না।  তিরমিযী)

عن العباس بن عبد المطلب رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم  سلوا الله العافية في الدنيا والآخرة.

৬.হযরত আব্বাস  (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন: তোমরা আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের নিরাপত্তা কামনা করো। (তিরমিজি,আবু দাউদ )

তাফসীরে মাজহারীতে এসব রেওআয়েত উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে যে, দুআ না করার কারণে আল্লাহর গযবের হুমকি তখন প্রযোজ্য, যখন কেউ নিজেকে বড় ও বেপরোয়া মনে করে দুআ ত্যাগ করে।(তাফসীরে মাজহারী)

عن ابن عمر قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من فتح له منكم باب الدعاء فتحت له أبواب الرحمة وما سئل الله شيئا يعني أحب إليه من أن يسأل العافية.

৭.হযরত ইবনে উমার রা. বলেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, যার জন্যে দোয়ার দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়া হয়, তার জন্য রহমতের দ্বার উন্মুক্ত করা হয়। নিরাপত্তা প্রার্থনা করা অপেক্ষা কোন পছন্দীয় দুআ আল্লাহর কাছে করা হয়নি।  (তিরমিজী)

 ‘নিরাপত্তা’ শব্দটি অত্যন্ত ব্যাপক অর্থবহ। এতে অনিষ্ট থেকে হেফাজত ও প্রত্যেক অভাব-অনটন পুরণই তার অন্তর্ভুক্ত।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও এরশাদ করেছেন,

عن أبي هريرة رضي الله عنه، أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: من لم يسأل الله يغضب عليه. إسناده حسن

৮.হযরত আবু হুরায়রা  (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন: যে আল্লাহর নিকট চায় না আল্লাহ তার প্রতি রাগান্বিত হন।” (তিরমিযী, মুসনাদে আহমাদ)

عن سلمان الفارسي رضي الله عنه قال: قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم ما رفع قوم أَكُفَّهم إلى الله  عز وجل  يسألونه شيئاً إلا كان على الله حقاً أن يضع في أيديهم الذي سألوا. رواه الطبراني في الكبير (৬১৪২)، وقال الهيثمي في مجمع الزوائد (১০/১৬৯): رجاله رجال الصحيح.

৯.হযরত সালমান ফারসী (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন: কোন জামাআত কিছু প্রার্থনা করার জন্য আল্লাহ তাআলার দরবারে হাত তুললে আল্লাহ তাআলার উপর ওয়াজিব হয়ে যায় তাদের প্রার্থিত বস্তু তাদের হাতে তুলে দেয়া।(তাবারানী কাবীর ) আল্লামা হায়ছামী রহ. বলেন, হাদীসটি বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত (মাযমাউয যাওয়ায়েদ ১০/১৬৯)

 

عن سلمان الفارسي عن النبي صلى الله عليه وسلم قال إن الله حي كريم يستحي إذا رفع الرجل إليه يديه أن يردهما صفرا خائبتين قال أبو عيسى هذا حديث حسن غريب وروى بعضهم ولم يرفعه

 

১০.হযরত সালমান ফার্সী রা.থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন:  নিশ্চই তোমাদের প্রভূ অত্যন্ত লজ্জাশীল ও দয়ালু। কোন বান্দা তাঁর নিকট হাত দুটি উঠিয়ে মুনাজাত করলে তার হাত খালি অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে তিনি লজ্জাবোধ করেন। (তিরমিজী,আবু দাউদ)

 

ফরজ নামাজ বাদ দুআ:

ফরজ নামাজ পর দুআ এটা শরীয়তের একটি স্বীকৃত এবাদত। এটা শরীয়ত বিরোধী কিছু নয়। মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:

 فإذا فرغت فانصب وإلى ربك فارغب

অতএব, যখন অবসর পান পরিশ্রম করুন।

এবং আপনার পালনকর্তার প্রতি মনোনিবেশ করুন। (সূরা- আল ইনশিরাহ ৭-৮)

ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন উক্ত আয়াতের তাফসীরে ইবনে আব্বাস রা. বলেন: তোমরা যখন ফরজ নামাজ থেকে ফারেগ হবে তখন দুআ কর। আর ফরজ নামাজ পর দুআ কবুল হয় এটা বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমানিত। তাই হাদীসের কেতাবসমূহে মুহাদ্দীসিনে কেরামগণ আলাদা অধ্যয়ই রচনা করেছেন যেমন:

باب الدعاء والذكر بعد الصلاة

অর্থ, নামাজের পর দুআ ও জিকিরের অধ্যায়।

বিধায় ফরজ নামাজ বাদ দুআ এটা একটি সতন্ত্র এবাদত এতে কারও কোন দিমত নেই। আর  যে সময়গুলোতে দুআ কবুল হয় সে সময়গুলোর মধ্যে অন্যতম সময় হচ্ছে ফরজ নামাজের পরের সময়গুলো।

ফরয নামাযের পর দুআ করলে কবুল হয়:

عن أبي أمامة رضي الله عنه مرفوعاً: قيل لرسول الله -صلى الله عليه وسلم أيُّ الدعاء أسمع؟ قال: جَوْفَ الليل الآخِر ودُبُر الصلوات المكتوبات).حسن.رواه الترمذي(

 

হযরত আবু উমামা বাহেলী রা. বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হল; কোন সময়ে দুআ করলে দুআ বেশি কবুল হয় ? তিনি বললেন, শেষ রাতে (তাহাজ্জুদের পর) এবং ফরজ নামায সমূহের পরে। ( সুনানে তিরমিযী; হাদীসটি হাসান পর্যায়ের)

ফরজ নামাযের পর যেহেতু দু‘আ কবুল হয়, তাই ফরজ নামাযের পর সকলের জন্য দু‘আয় মশগুল হওয়া বাঞ্ছনীয়।

 

দুআতে হাত উঠানো:

দোয়ায় হাত উঠানো দোয়ার একটি আদব। বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা তা প্রমানিত এ বিষয়ে কয়েকটি হাদীস নি¤েœ তুলে ধরা হলো।

 ইমাম বোখারী রহ. বোখারী শরীফে এবং ইমাম নববী রহ. তার কেতাব ‘আল-মাজমু’তে

باب رفع اليدين في الدعاء

 অর্থাৎ, দোয়াতে হাত উঠানোর অধ্যায়ে হযরত ইবনে উমার রা. এর এ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।

ومنها: ما رواه البخاري بأسانيد صحيحة، وذَكَرَهُ النووي في كتابه "المجموع"؛ باب رفع اليدين في الدعاء، عن عائشة - رضي الله عنها - قالت: رأيتُ النبي - صلى الله عليه وسلم - يدعو رافعًا يديه، يقول: إنما أنا بشر فلا تعاقبني، أيما رجل من المؤمنين آذيته أو شتمته، فلا تعاقبني فيه

হযরত আয়শা রা. বলেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’হাত তুলে দুআ করতেন এবং বলতেন: হে আল্লাহ! আমিও একজন মানুষ, যদি আমি কোন মুমিনকে কষ্ট দিয়ে থাকি বা গালি দিয়ে থাকি তাহলে আমাতে বদলা নেয়া থেকে আমি তোমার কাছে পানাহ চাই।

(জ্ঞাতব্য: রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন দিন কাউকে গালিও দেন নি বা অন্যায় ভাবে কাউকে আঘাতও করেন নি।

عن أنس بن مالك رضي الله عنه قال لم يكن النبي صلى الله عليه وسلم سبابا ولا فحاشا ولا لعانا كان يقول لأحدنا عند المعتبة ما له ترب جبينه

হযরত আনাছ রা. রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অশালীন বাক্য উচ্চারণকারী, লানতকারী  এবং গালিগালাজকারী ছিলেন না। তিনি যখন কারো প্রতি নারাজ হতেন, তখন কেবল এতটুকুই বলতেন যে, “তার কি হলো? তার কপাল ভূলুন্ঠিত হোক।” (বোখারী)

ترب جبينه ” অর্থ: তার কপাল ভূলুন্ঠিত হোক। এটা আরবদের কথার বাগধারা মাত্র। অভিশাপ বা বদদোয়ার অর্থে ব্যবহৃত হয় না।

হযরত আনাছ রা. থেকে বর্ণিত হাদীসটিতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতকে দুআ শিক্ষা দিয়েছেন যে দোয়ার ক্ষেত্রে কি পরিমাণ আগ্রহ নিয়ে দুআ করতে হয়! এবং নিজেকে আল্লাহর দরবারে কিভাবে পেশ করতে হয় এবং মানুষ হিসেবে যে সবারই ভুল হতেই পারে এবং নিজের অজান্তে কোন ভূল হেয়ে গেলে সে বিষয়েও যে সতর্ক থাকতে হয় তা শিক্ষা দিয়েছেন।)

الحديث الذي رواه مسلم، عن عمر - رضي الله عنه - قال: لما كان يوم بدرنظر رسول الله - صلى الله عليه وسلم - إلى المشركين، وهم ألف، وأصحابه ثلاثمائة وتسعة عشر رجلًا، فاستقبل نبي الله - صلى الله عليه وسلم - القبلة، ثم مد يديه فجعل يهتف بربه، يقول: اللهم أنجز لي ما وعدتني، اللهم آتِ ما وعدتني؛ فما زال يهتف بربه مادًّا يديه، حتى سقط رداؤه عن منكبيه.

ইমাম মুসলিম রহ. হযরত উমার রা. থেকে বর্ণনা করেন। বদরের দিন যখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কার মুশরিকদের দিকে তাকায় দেখলেন যে তাদের সংখ্যা এক হাজার ও সাহাবাদের সংখ্যা তিনশত তের জন, তখন তিনি কেবলার দিক হয়ে দুহাত দারাজ করে দোয় করলেন:

 

দুআতে হাত উঠানোর ব্যাপারে মুহাদ্দীসিনেকেরামদের মধ্যে কোন মতানৈক্য নেই:

 

وقال النووي في "شرح صحيح مسلم": هي أكثر من أن تُحصَر ومن هذه الأحاديث ما رواه البخاري عن أبي موسى الأشعري، قال: دعا النبي  صلى الله عليه وسلم  ثم رفع يديه ورأيت بياض إبطيه وما رواه أبو داود والترمذي وابن ماجه عن سلمان الفارسي: أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: إن ربكم حيي كريم يستحي من عبده إذا رفع يديه إليه أن يردهما صفرًا أو قال خائبتين.

দুআতে হাত উঠানোর ব্যাপারে মুহাদ্দীসিনে কেরামদের মধ্যে কোন মতানৈক্য নেই। মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থে আল্লাামা নববী রহ. বলেন: দুআতে হাত উঠানোর হাদীস অগণিত। এর মধ্যে থেকে একটি হাদীস হযরত আবু মুসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুআ করতেন এবং দুআতে হাত উঠাতেন তাতে আমরা তার বগলের সুভ্রতা দেখতে পেতাম। অনুরূপ ইমাম আবু দাউদ,ইমাম তিরমিজী ও ইমাম ইবনে মাজাহ হযরত সালমান ফার্সী থেকে আরও একটি হাদীস রেওয়ায়েত করেছেন। হযরত সালমান রা. বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন তোমাদের প্রতিপালক  অত্যন্ত লজ্জাশীল  ও দয়ালু। বান্দা যখন  (প্রার্থনার জন্য) তাঁর প্রতি হস্ত উত্তোলন করে তখন তিনি শূন্যহস্ত ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।

يقول القُرطبي:‏ والدعاء حسن كيفما تيسَّر، وهو المطلوب من الإنسان؛ لإظهار موضع الفقر والحاجة إلى اللَّه - عزَّ وجلَّ - والتذلُّل له أو الخضوع، فإن شاء استقبل القبلة ورفع يديه فحسن، وإن شاء فلا؛ فقد فَعَل ذلك النبي - صلى الله عليه وسلم - حسبما ورد في الأحاديث، وقد قال الله تعالى: ﴿ ادْعُوا رَبَّكُمْ تَضَرُّعًا وَخُفْيَةً ﴾ )الأعراف: ৫৫(

 ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন, সব দোয়াই ভালো। মানুষ নিজেকে ছোট মনে করে লজ্যিত হয়ে ন¤্রতার সাথে স্বীয় উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য আল্লাহর দরবারে দুআ করবে। দোয়ার সময় সে কিবলার দিক হতেও পারে নাও পারে। এবং তাতে হাত উঠানো উত্তম তবে না উঠালে কোন সমস্যা নেই। (তাফসীরে কুরতুবী,সূরা আরাফ; ৫৫)

قال ابن حجر في الفتح ‏قال العلماء:‏ السنة في كل دعاء لرفع بلاء أن يرفع يديه، جاعلًا ظهر كفيه إلى السماء، وإذا دعا بحصول شيء أو تحصيله أن يجعل بطن كفيه إلى السماء،‏ وكذلك قال النووي في "شرح صحيح مسلم"، حاكيًا لذلك عن جماعة من العلماء.‏

ইবনে হাজার আসকালানী রহ. ফাতহুল বারীতে বলেন: উলামায়ে কেরামগণ বলেনে, বালা-মুসীবাত দূর করার জন্য দুহাত আসামানের দিকে তুলে আল্লাহর কাছে দুআ করবে এবং দোয়ার সময় দুহাতের তালু আসমানের দিকে থাকবে। ইমাম নববী রহ.ও মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থে অনুরূপ লিখেছেণ।

হযরত ইবরাহীম আলাইহিসসালাম দোয়ায় হাত উঠিয়ে ছিলেন:

হযরত ইবরাহীম আ. শিশু ইসলাইল আ. কে মক্কায় রেখে আসার সময় যখন ছানিয়া পাহাড়ের কাছে আসলেন তখন ছেলে ও স্ত্রীকে দেখতে পাচ্ছিলেন না, তখন কিবলার দিক হয়ে দুহাত তুলে এ দুআটি করেছিলেন:

ثم رجعت. فانطلق إبراهيم حتى إذا كان عند الثنية حيث لا يرونه استقبل بوجهه البيت, ثم دعا بهذه الدعوات ورفع يديه, فقال:ربنا إني أسكنت من ذريتي بواد غير ذي زرع عند بيتك المحرم)سورة البقرة آية ২৪৩(

এ বিষয়ে আহলে হাদীসদের সব থেকে বড় অয়েব সাইট ‘মুলতাকা আহুলুল হাদীস’ থেকে কিছু আলোচনা সংক্ষেপে তুলে ধরছি:

 قائل فيما روى يزيد بن زريع حدثنا سعيد بن أبى عروبة، عن قتادة، أن أنس بن مالك حدثه: أن النبي - صلى الله عليه وسلم - كان لا يرفع يديه في شيء من الدعاء إلا عند الاستسقاء، فأنه كان يرفعهما حتى يرى بياض إبطيه. قيل: قد روى ابن جريج، عن مقسم، عن ابن عباس، عن النبي - صلى الله عليه وسلم - أنه قال: لا ترفع الأيدي إلا في سبعة مواطن في بدء الصلاة، وإذا رأيت البيت، وعلى الصفا والمروة، وعشية عرفة، وبجمع، وعند الجمرتين . وهذا مخالف لحديث سعيد بن أبى عروبة عن قتادة، وقد ثبت عن النبي - صلى الله عليه وسلم - رفع الأيدي في الدعاء مطلقًا من وجوه. منها: حديث أبى موسى وابن عمر وأنس من طرق أثبت من حديث سعيد بن أبى عروبة عن قتادة عن أنس، وذلك أن سعيد بن أبى عروبة كان قد تغير عقله وحاله في آخر عمره، وقد خالفه شعبة في روايته عن قتادة، عن أنس فقال فيه: " كان رسول الله يرفع يديه حتى يُرى بياض إبطيه " .ولا شك أن شعبة أثبت من سعيد بن أبى عروبة.

 

অর্থ,যারা বলেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  সালাতে ইসতিসকা ছাড়া আর কোথাও হাত উঠাননি তারা  দুইটি হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেন।

 ১. হযরত আনাস ইবনে মালেক রা. এর হাদীস দ্বারা দলীল দেন। আর এ হাদীসটি হযরত সাঈদ ইবনে আরুবা হযরত কাতাদাহ কর্তৃক হযরত আনাছ রা. থেকে বর্ণনা করেন যে,  রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাতে ইসতিসকা ছাড়া আর কোথাও হাত উঠাননি।

 ২. হযতর ইবনে আব্বাস রা.এর আর একটি বর্ণনা তুলে ধরেন যে, সাত জায়গা ছাড়া রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আর কোথাও হাত উঠাননি।

১. নামাজের শুরুতে। ২. বায়তুল্লাহ নজরে আসলে। ৩. সাফা ও ৪. মারওয়ায় উঠে। ৫. সন্ধ্যায় আরাফার ময়দানে ৬. মুযদালাফায়। ৭.দুই যামরার নিকটে (যে যামরাটি মাসজিদের খায়েফের নিকটে) ও যামরায়ে উসতায়। 

উল্লিখিত বর্ণনা দুটি বিশুদ্ধ হাদীস এর বিপরীত। কারণ বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে সাধারণভাবে দুআতে হাত উঠানো রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে প্রমাণিত।

এবং  দুআতে হাত উঠানো হাদীসগুলো হযরত আবু মুছা আশআরী, হযরত ইবনে উমার ও হযরত আনাছ রা. থেকে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত।

 হযরত আনাছ থেকে দোয়াতে হাত না উঠানোর হাদীসটির সনদের ব্যপারে মুহাদ্দীসিনেকেরামগণ বলেন হযরত সাঈদ ইবনে আবী আরুবার শেষ বয়সে এসে তার অবস্থা ভালো ছিলো না  বরং তার দিমাগে সমস্যা দেখা দিয়ে ছিলো এবং তার বিপরীত ইমাম শু‘বা রহ. হযরত কতাদাহ কতর্িৃক আনাস রা. থেকে হাদীস বর্ণনা করেন যে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুআতে হাত উঠাতেন এমনকি তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখা যেত। তাই  বিশুদ্ধ মত হচ্ছে দুআতে হাত উঠানো সুন্নাহ সমর্থিত একটি আমল।

নি¤েœ আরোও কয়েকটি হাদীস তুলে ধরা হলো:

عن عائشة رضي الله عنها أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال:"هل لك يا عائشة أن تأذني لي في عبادة ربي... فقام إلى قربة من ماء البيت، فتوضأ ولم يكثر من صب الماء، ثم قام يصلي، فقرأ من القرآن وجعل يبكي حتى بلغ الدمع حقويه، ثم جلس فحمد الله تعالى وأثنى عليه، وجعل يبكي، ثم رفع يديه يبكي...

হযরত আয়শা রা. বলেন একদিন রাসূল আমার কাছে ছিলেন। তিনি এবাদতের জন্য আমার কাছে অনুমতি চাইলেন অতঃপর পানির মশকের নিকট গিয়ে অজু করলেন। খুব কম পানি দিয়ে অজু করলেন অতঃপর নামাজ পড়লেন এবং কোরআন তেলাওয়াত করলেন এবং এমন কান্না করলেন যে তাঁর চোখের পানি কোমর পর্যন্ত পৌঁছে গেল। তারপর  বসে আল্লাহ তাআলার হামদ ও ছানা করলেন এবং কাঁদতে থাকলেন অতঃপর দুহাত তুলে দুআ করলেন।

ذكره الشيخ محمد بن عبد الرحمن الزبيدي اليماني في رسالته الملحقة بمعجم الطبراني الصغير والمسماة ب:" سنية رفع اليدين في الدعاء بعد الصلوات المكتوبة لمن شاء"، قال: أخرج أبو بكر قي مصنفه عن الأسود العامري رضي الله عنه قال:" صليت مع رسول الله صلى الله عليه وسلمالفجر فلما سلم انحرف ورفع يديه ودعا"، وكذا ذكره المباركفوري في تحفته مستدلا به على مشروعية الرفع وقال:عزاه بعضهم إلى ابن أبي شيبة، ثم ذكر بأنه لم يجده بهذا اللفظ، لكن أصل هذا الحديث صحيح

হযরত আছওয়াদ আমেরী রা. বলেন আমি রাসূল এর সাথে ফজরের নামাজ পড়েছি যখন তিনি সালাম ফিরে ঘুরে বসলেন  তখন দুহাত তুলে দুআ করলেন।

 

ফরয নামাযের পর রসূল সা. হাত তুলে দুআ করতেন:

عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم رفع يده بعد ما سلم وهو مستقبل القبلة

 ১.হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম নামাজে সালামের পর কিবলামূখী হয়ে দুহাত তুলে দুআ করতেন। (হাদীসটি সহীহ) (তাফসীরে ইবনে কাসীর;১/৮১২)

عن محمد بن يحيى الأسلمي ، قال : رأيت عبد الله بن الزبير ورأى رجلا رافعا يديه قبل أن يفرغ من صلاته فلما فرغ منها قال : إن رسول الله صلى الله عليه وسلم لم يكن يرفع يديه حتى يفرغ من صلاته قال رجاله ثقات

২.হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. তিনি একদিন এক ব্যক্তিকে দেখলেন নামাজ শেষ হওয়ার আগেই দুহাত তুলে দুআ করছেন। যখন ঐ ব্যাক্তি নামাজ শেষ করলেন তখন আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের তাকে বললেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজ শেষ না করা পর্যন্ত হাত তুলে দুআ করতেন না।(তাবারনী কাবীর) (হাদীসটি সহীহ)

عن أنس عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال : ما من عبد بسط كفيه في دبر كل صلاة ، ثم يقول اللهم إلهي وإله إبراهيم وإسحاق ويعقوب وإله جبريل وميكائيل وإسرافيل أسألك أن تستجيب دعوتي فإني مضطر ، وتعصمني في ديني فإني مبتلى ، وتنالني برحمتك فإني مذنب ، وتنفي عني الفقر فإني متمسكن ، إلا كان حقا على الله عز وجل أن لا يرد يديه خائبتين

হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন কোন বান্দা যখন ফরজ নামাজ বাদ দুহাত তুলবে অতঃপর বলবে হে আল্লাহ ! আপনি আমার রব এবং ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক ও ইয়াকুবের রব এবং জিবরাইল মিকাইল ও ইসরাফিলের রব। হে আল্লাহ! আমি নিরুপায়  আমার দুআ কবুল করেন। হে আল্লাহ! আপনি আমার দ্বীন-ধর্মের ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করুন কারণ এ ব্যাপারে আমি বিপদগ্রস্থ। হে আল্লাহ !  আপনি আমাকে আপনার রহমত দ্বারা ঢেকে নিন আমি গুনাহগার। হে আল্লাহ ! আমি গরীব তুমি আমার অভাব দূর করে দাও। রসূল সা.  বলেন এভাবে দুআ করলে আল্লাহ তাকে খালি হাতে ফেরত দিবেন না।

(আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাতী)

বিঃদ্রঃ: দুআতে হাত উঠানো সম্পর্কীয় কিছু হাদসী জঈফ বা দুর্বল রয়েছে, তবে তার সমর্থনে বহু সহীহ হাদীস থাকার কারণে তা আমল যোগ্য। হাদীসের নীতি কথা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়। (ইরশাদুল মুহতাদীন ফি ইজাহী বাজিল মাসাইল;১৬২)

حديث الفضل بن عباس قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الصلاة مثنى مثنى، تشهد في كل ركعتين ، وتخشع وتضرع وتمسكن ، ثم تقنع يديك ، يقول ترفعهما إلى ربك مستقبلا ببطونهما وجهك ، وتقول يا رب يا رب ، ومن لم يفعل ذلك فهو كذا وكذا ، وفي رواية : فهو خداج.( رواه الترمذي)(قال ابن حجر رحمۃ اللہ علیہ سندہ حسن)

হযরত ফজল ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজ দু’ দু’ রাকাত করে আদায় করা ভালো। প্রত্যেক দু’ রাকাতে তাশাহহুদ রয়েছে। আর নামাজ আদায় করতে হবে একগ্রতা, বিনয়  ও দীন-হীনতার সাথে। অতঃপর তোমার হাতদ্বয় উত্তোলন করবে। বর্ণনাকারী বলেন হাতদ্বয় উত্তোলন করার মর্ম হলো তুমি দোয়ার জন্য তোমার প্রতিপালকের দিকে এমনভাবে হাতদ্বয় উত্তোলন করবে যেন উভয় তালু তোমার মুখের সম্মুখে থাকে।যে ব্যক্তি এরূপ করে না সে অর্থাৎ তার নামাজ এরূপ এরূপ। (হাদীসটি হাসান পর্যায়ের)

 

সম্মিলিত দুআ:

عن أبي هبيرة ، عن حبيب بن مسلمة الفهري - وكان مستجابا - : أنه أمر على جيش فدرب الدروب ، فلما لقي العدو قال للناس : سمعت رسول الله - صلى الله عليه وسلم - يقول : " لا يجتمع ملأ فيدعو بعضهم ويؤمن سائرهم ، إلا أجابهم الله

قال الهيثمي في مجمع الزوائد " (১৭০/১০ ( (رجاله رجال الصحيح غير ابن لهيعة وهو حسن الحديث

 

সাহাবিয়ে রাসূল হযরত হাবীব ইবনে মাসলামা আলফিহরী রা.যিনি বলেন: ‘মুস্তাজাবুদ দাওয়াত’ ছিলেন, একবার তাকে একটি বাহিনীর আমীর নিযুক্ত করা হয়। তিনি যুদ্ধের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সমাপ্ত করার পর যখন যুদ্ধের সময় নিকটবর্তী হল তখন সহযোদ্ধাদের লক্ষ্য করে বললেন-

سمعت رسول الله - صلى الله عليه وسلم - يقول : " لا يجتمع ملأ فيدعو بعضهم ويؤمن سائرهم ، إلا أجابهم الله

আমি রসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, মুসলমানদের একটি দল যখন একত্রিত হয়ে এভাবে দুআ করে যে,  তাদের মধ্যে কেউ দুআ করে আর অন্যরা আমীন আমীন বলতে থাকে, তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তাআলা তাদের দুআ কবুল করে থাকেন।(মুজামে কাবীর, তাবরানী, মুসতাদরাকে হাকেম) আল্লামা হায়ছামী রহঃ বলেন, উক্ত হাদীসটি বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত ইবনে লাহিয়াহ ছাড়া। কিন্তু সেও হাসান পর্যায়ের রাবী। (মাযমাউয যাওয়ায়েদ)

عن ثوبان عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لا يؤم قوما فيخص نفسه بدعوة دونهم فإن فعل فقد خانهم ولا يقوم إلى الصلاة وهو حقن قال وفي الباب عن أبي هريرة وأبي أمامة قال أبو عيسى حديث ثوبان حديث حسن

হযরত ছাওবান রা. হতে বর্ণিত, রসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন:যে ব্যক্তি কোন ক্বওমের ইমাম হয়ে নামাজ পড়ালো আর দুআ করার সময় সেই ক্বওমকে বাদ দিয়ে শুধু নিজের জন্য দুআ করলো তো, সে তারেদ সাথে খিয়ানত করলো।

(তিরমিযী শরীফ)

এ হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, ইমাম সাহেব সকল মুসল্লীদের সঙ্গে নিয়ে সকলের জন্য দু’আ করবেন। নতুবা তিনি খিয়ানতকারী হবেন।

ইসলাম ওয়েব নেটের একটি মাসআলা:

والحاصل بعد هذا كله أن الدعاء دبر الصلوات بعد الفراغ من الذكر المشروع مشروع ثابت، وأن رفع اليدين في الدعاء أيضاً مشروع ثابت، وعليه فمن دعا بعد كل صلاة ورفع يديه حال الدعاء لا ينكر عليه فعله، ولو داوم على ذلك، وما روي عن بعض أهل العلم من كراهة ذلك مرجوح بما تقدم من الأدلة وأقوال أهل العلم.

ومع ذلك فقد كره العلماء لمن يقتدي به العوام من إمام أو عالم أو نحوهما المداومة على بعض السنن التي قد يظن العوام أنها فرائض أو من تتممات الفرئض، ويدخل في ذلك مسألتنا هذه.لكن ورد حديث في رفع اليدين في الدعاء بعد الصلوات المكتوبة .اخرج ابن ابي شيبة قال حدثنا محمد بن يحيى الاسلمي قال رايت عبدالله بن الزبير وراى رجلا رافعا يديه يدعو قبل ان يفرغ من صلاته فلما فلما فرغ منها قال له ان رسول الله صلى الله عليه وسلم لم يكن يرفع يديه حتى يفرغ من صلاته .

قلت : وذكره الحافظ الهيثمي في مجمع الزوائد وقال رواه الطبراني وترجم له فقال محمد بن يحيى الأسلمي عن عبد الله بن الزبير ورجاله ثقات ، انتهى .

 

সার কথা হচ্ছে; ফরজ নামাজ পর মাসনুন দুআ আদায় করতঃ হাত তুলে দুআ করা শরীয়ত সম্মত। বিধায় যারা প্রত্যেক নামাজ পর হাত তুলে দুআ করবে তাতে কোন বাধা নেই যদিও তা সর্বদা করা হয়। তবে কিছু সংখ্যক উলামায়ে কেরাম ফরজ নামাজ বাদ হাত তুলে দুআ করাকে মাকরুহ বলেছেন তবে তা গ্রহণীয় নয়। তবে হাঁ, এই দোয়াকে এমন পর্যায়ে না নেয়া যে, সাধারণ মানুষ ফরজ নামাজ বাদ হাত তুলে দুআ করাকে যেন জরুরী মনে না করে। যদি তাদের এমন ধারণা হয় যে এই দুআ নামাজেরই অংশ এবং দুআ না করলে নামাজ পরিপূর্ণ হবে না তাহলে এটা অবশ্যই বর্জনীয়।

কিন্তু ফরজ নামাজের পর দুহাত তুলে দুআ করার ব্যাপারেও হাদীস রয়েছে। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাতে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে হযরত আব্দুল্লাহ এবনে যুবাইর রা. তিনি একদিন এক ব্যক্তিকে দেখলেন নামাজ শেষ হওয়ার আগেই দুহাত তুলে দুআ করছেন। যখন ঐ ব্যাক্তি নামাজ শেষ করলেন তখন আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের তাকে বললেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজ শেষ না করা পর্যন্ত হাত তুলে দুআ করতেন না।

 

দুআতে হাত কোন পর্যন্তা উঠাবে:

 

 

عن ابن عباس أن رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم قال : المسئلۃ أن ترفع یدیک حذو منکبیک۰

)رواہ أبو داود : الحدیث  صیحح(

 

৬। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত রসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন: দুআ করার তরীকা হল যে, তুমি উভয় হাত কাঁধ বরাবর তুলবে।(আবু দাউদ শরীফ)

 

وفی المصنف ایضا(৩/১২৩ رقم ৫০০৩) عن معمر عن الزھری قال کان رسول اللہ یرفع یدیہ بحذاء صدرہ اذادعا ثم یمسح بھا وجھہ۔

( طليعة فقه الإسناد؛৮৩)

মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক গ্রন্থে হযরত যুহরী রহ. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুআতে সিনা বরাবর হাত উঠাতেন হস্তদ্বয় দ্বারা মুখম-ল মাছেহ করতেন।

বিনয়াবনতা প্রকাশের জন্য দুআতে হাত সিনা ও কাঁধ পর্যন্ত উঠানোর অনুমতি আছে ।

দুআর শেষে দু’হাত দ্বারা মুখ মাছাহ করা:

عن سالم بن عبد الله ، عن أبيه عن عمر بن الخطاب رضي الله عنه قال : كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا رفع يديه في الدعاء لم يحطهما حتى يمسح بهما وجهه

হযরত উমার রা. হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন দোয়ার জন্য হস্তদ্বয় উত্তোলন করতেন তখন মুখম-ল না মুছে তা নামাতেন না।

ইমাম তিরমিজী র. হাদীসটাকে জায়ীফ বলেছেন। প্রখ্যাত মুহাদ্দীস আল্লামা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী র. (ওফাত:১৩৫৩) তাঁর লিখিত তিরমিজী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থে হাদীসটিকে হাসান বলে আখ্যায়িত করেছেন।

قوله : هذا حديث صحيح غريب إلخ  وقد تفرد به حماد بن عيسى وهو ضعيف كما عرفت فالحديث ضعيف . قال الحافظ في بلوغ المرام : وله شواهد منها حديث ابن عباس عند أبي داود ومجموعها يقتضي أنه حديث حسن انتهى .

عن عبد اللہ بن عباس رض قال رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم إذا فرغت من الدعاء فامسح بیدیک وجهک۰

)رواہ ابن ماجۃ : ۲۷۵، وأبو داود : ۱/۲۰۹ الحدیث ۱۴۹۲(

 

৭। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত রসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: যে, যখন তুমি দু’আ শেষ করবে তখন উভয় দ্বারা তোমার চেহারা মুছবে।

হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী র. বুলুগুল মুরামে এ হাদীসের ব্যাপারে বলেন যে, উক্ত হাদীসটির (শাওয়াহেদ) অনূরূপ আরো বর্ণনা পাওয়া যায় যা এ হাদীসকে আরো শক্তিশালী করে। যেমন আবু দাউদ শরীফে হযরত ইবনে আব্বাস থেকে অনূরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সব মিলিয়ে হাদীসটি হাসানের স্তরে পৌঁছে যায়। এ ছাড়াও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর থেকে এ সম্পর্কীয় হাদীস বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হয়েছে।

 

উহসংহার:

সম্মিলিত বা একা; সব ধরণের দুআর আদেশ দিয়েছেন মহান আল্লাহ তাআলা:

وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ ۚ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ

তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব। যারা আমার এবাদতে অহংকার করে তারা সত্বরই জাহান্নামে  দাখিল হবে লাঞ্ছিত হয়ে। (সূরা-মুমিন; ৬০)

আল্লাহ তাআলা যেহেতু দুআর আদেশ দিয়েছেন। আর এই সাধারণ আদেশের মধ্যে যেমন একা একা দুআর করার আদেশ রয়েছে তেমনি সম্মিলিত ও দল ধরে দুআ করার আদেশও রয়েছে। তাই দুআ সর্বাবস্থায় শরীয়ত সম্মত একটি এবাদত। চাই ফরজ নামাজ বাদ হোক বা অন্য কোন স্থানে হোক ; সম্মিলিত দুআ কখনও বিদআত হতে পারে না। 

সম্মিলিত দুআর সাধারণ আদেশ  রয়েছে এই আয়াতে: وقال ربكم ادعوني অর্থ তোমরা আমাকে ডাক আমি তোমাদের ডাকে সারা দেব।

এ আয়াতে সম্মিলিতভাবে ডাকার আদেশ করা হয়েছে। আর সম্মিলিত দুআ কখনও একক ব্যক্তি দ্বারা সম্ভভ নয়, তার জন্য দরকার অনেক মানুষ। বিধায় দুআর ক্ষেত্রে আসল হচ্ছে সম্মিলিত দুআ করা। তবে একা একাও দুআ করা যায়। বিধায় সম্মিলিত দুআর জন্য আলাদা কোন দলীলের দরকার পরে না। এটি এমনিতেই শরীয়ত সম্মত। তাই সম্মিলিত দুআয় একজন দুআ করবে আর বাকিরা আমীন আমীন বলবে;এটা বৈধ।

আর কুরআন মাজীদে ‘দুআ’ “الدعاء” শব্দিটি আলীফ-লাম যোগে ব্যাবহার হয়েছে যেমন: (إن ربي لسميع الدعاء)( أجيب دعوة الداع) । আর ‘আলীফ-লাম’ যোগে যে শব্দ ব্যাবহার হয় তার অর্থে ব্যাপকতা এসে যায়, তখন সেটা সম্মিলিত ও একা একা উভয়কেই বুঝায়। বিধায় দুআ দ্বারা সর্ব প্রকার দুআকেই বুঝানো হয়েছে উক্ত আয়াতে।

সাহাবিয়ে রাসূল হযরত হাবীব ইবনে মাসলামা আলফিহরী রা. থেকে বর্ণিত হাদীস

(سمعت رسول الله - صلى الله عليه وسلم - يقول : " لا يجتمع ملأ فيدعو بعضهم ويؤمن سائرهم ، إلا أجابهم الله)

থেকে বোঝা যায় সম্মিলিত দুআ বৈধ চাই সেটা নামাজে পরে হোক বা অন্য কোথাও হোক। কারণ আরবী ব্যাকরণের একটি মূল নীতি হলো: (النكرة في سياق النفي تفيد العموم ) না সূচকের পরে নাকেরা(অনির্দিষ্ট শব্দ) আসলে সেখানে ব্যাপকতার অর্থ দেয়। উক্ত হাদীসে “ اجتماع ” “ ملأ” শব্দটি নাকেরা, আর এই নাকেরা শব্দটি না সূচক অর্থাৎ “ لا” এর পরে এসেছে বিধায় সম্মিলিত দুআ সব খানেই বৈধ। চাই নামাজের পরে হোক বা অন্য কোথাও হোক।

 যারা সম্মিলিত দুআর বিরুদ্ধে কুরআন সুন্নাহর পরিস্কার কোন নিষেধাজ্ঞা না থাকা সত্ত্বেও এর বিরোধীতা করে প্রকৃত পক্ষে তারা সম্মিলিত দুআর বিরোধীতা করে না বরং কুরআনের বিরোধীতা করে।

কথা ভালো মতলব খারাপ:

অনেকে বলে থাকেন ফরজ নামাজ পর সম্মিলিত দুআ করা যদি ভালই হত! তাহলে রসূল সা. তা কখনও করেন নি কেন? বিধায় যে কাজ রসূল সা. করেন নি তা বিদআত ও বর্জনীয়!

যারা এমন কথা বলে থাকেন; তাদের কথা ভালো, কিন্তু মতলব খারাপ। কারণ ইসলামে


প্রসঙ্গ: প্রবন্ধ মন্তব্য: 0


আপনার মন্তব্য লিখুন


Graveter Image

নাম

April 12