বিস্তারিত

শবে বারাআত নিয়ে আমাদের চিন্তা-ভাবনা

মাওলানা মুফতী আব্দুল আহাদ 19 এপ্রিল

 

নাম করণ:

شب براءة  (শবে বারাআত) ফার্সী শব্দ, شب যার অর্থ রাত। আর براءة (বারাআত) অর্থ নিষ্কৃতি, দায়মুক্তি। যেহেতু এ রাতে আল্লাহ তাআলা বহুসংখ্যক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি তথা নিষ্কৃতি দান করেন তাই এ রাতকে شب براءة  বলা হয়। যে সমস্ত বরকতময় রজনীতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দান করে থাকেন, শবে বরাত তাদেরই অন্যতম।এ রাতটি তাফসীর-হাদিস ও ফেক্বাহ শাস্ত্রের কিতাব সমুহে ليلة النصف من شعبان শব্দে বর্ণিত হয়েছে যার অর্থ  শাবানের মধ্য রজনী। মূলত এ রাতটি হলো শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত অর্থাৎ শাবানের পঞ্চদশ রজনী।

এ রাতের আরো কয়েটি নাম:

শাবান মাসের মধ্য রজনী’র চারটি উল্লেখযোগ্য নাম রয়েছে আর তা হলোঃ

১.    ليلة البراءة (মুক্তি বা নিষ্কৃতির রাত)

২. ليلة مباركة  (বরকতময় রজনী )৩. ليلة الرحمة  (দয়া ও রহমতের রাত )৪. ليلة الصك  (দায়মুক্তির রাত) ।

২.    এ রাতকে ‘লাইলাতুস সাক’ নামে নামকরণের কারণ হিসেবে তাফসীরে কাশশাফে বর্ণিত আছে যে- যখন কোন ব্যক্তি তার উপর ধার্যকৃত কর পরিশোধ করেন তখন তাকে কর আদায়কারী ব্যক্তির পক্ষ থেকে একটি দায়মুক্তির সনদ দেয়া হয়, অনুরূপভাবে আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় বান্দাদের এ রাত্রিতে জাহান্নাম থেকে মুক্তির সনদ প্রদান করে থাকেন।’’

                                                                  (তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে কাশশাফ, তাফসীরে কাবীর, শায়েখ যাদাহ)

শবে বারাআত নিয়ে নানা বিভ্রান্তি:

শবে বারাআত (ليلة النصف من شعبان) বা শাবানের মধ্য রজনী  নিয়ে শুধু আমাদের দেশে নয়, বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের  মাঝে নানা রকম কুসংস্কার ও ভুল চিন্তা ভাবনা বিদ্যমান রয়েছে। তাই ঈমানের দাবী হচ্ছে কোরআন সুন্নাহর আলোকে সঠিক কর্তব্যকরনীয়  খুঁজে বের করে সে মতে আমল করাএবং ভূল ধারনা ও কর্মপন্থা থেকে বিরত থাকা। হে আল্লাহ! আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করুন। আমীন।

আল-কোরআনে  কি শবে বরাআতের আলোচনা আছে?

কেউ কেউ সূরা দুখানের ৩নং (إنه أنزله في ليلة مباركة)  আয়াতের ব্যাখ্যায় “লাইলাতুল মুবারাকহ” দ্বারা শবে বরাআতের কথা উল্লেখ করেছেন। এ মতটি প্রত্যাখ্যাত। সংখ্যাগরিষ্ঠ তাফসীরকারগণ এটাকে বর্জন করেছেন। আল্লামা ইবনে কাসীর এ আয়াতে ব্যাখ্যায় বলেন: ‘ ليلة مباركة ’ হচ্ছে ‘ ليلة القدر ’ যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন: إنا أنزلناه في ليلة القدر .আমি এ কোরআনকে নাযিল করেছি শবে কদরে।(সূরা ক্বদর;১) আর শবে কদর হচ্ছে রমজাম মাসে যেমন এরশাদ হচ্ছে: شهر رمضان الذي أنزل فيه القرآن

আর রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোনআন। (সূরা বাকারাহ; ১৮৫)

যারা কুরআনের এমন স্পষ্ট ও পরিস্কার ভাষা না বুঝে মুরসাল হাদীসের পিছে পরে ‘লাইলাতুল মুবারাকাহ’ দ্বারা শাবান মাসের পঞ্চদশতম রাত কে বুঝান তারা সঠিক ব্যাখ্যা হতে অনেক দূরে সরে গেছেন। (তাফসীরে ইবনে কাসীর) 

শাবান মাসের প্রতি রসূল দৃষ্টি রাখতেন:

শাবান মাস বরকরেত মাস। পবিত্র রমযান কে সামনে রেখে এ মাসে অনেক বরকত জমা হয় এবং ছড়িয়ে পরে তাই এ মাসকে শাবান মাস বলা হয়। উমদাতুল কারী; ৯/১৭৫।

 রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মাসে বেশী বেশী রোজ রাখতেন। হযরত আয়েশা রা. বলেন:

 وَمَا رَأَیْتُہ فِيْ شھر اَکْثَرَ مِنْہُ صِیَامًا فِيْ شَعْبَانَ

 আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে  শাবান মাস ব্যাতীত কোন মাসে এত বেশী রোজা রাখতে দেখিনি। (বোখারী)

যে মাসে রোযা রাখা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেশী পছন্দ করতেন: 

وعن عائشةَ رضي الله عنها قالت: كانَ أَحَبَّ الشُّهُورِ إلى رسولِ اللهِ صلَّى اللهُ عليهِ وسلَّمَ أَنْ يَصُومَهُ: شعبَانُ ثُمَّ يَصِلُهُ برَمَضَانَ رواه الإمام أحمد وصحَّحه ابنُ خزيمة.

والحديث أخرجه الحاكم في المستدرك وقال صحيح على شرط الشيخين  وأقره الذهبي.

হযরত আয়শা রা. বলেন শাবান মাসের রোজ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে সব থেকে বেশী প্রিয় ছিলো এবং তা রমযান পর্যন্ত হত।    ( আবু দাউদ, মুসনাদে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, ইবনে খুযাইমা, মুসতাদরাকে হাকেম)

অন্য এক হাদীসে হযরত আয়শা রা. থেকে বর্ণিত:

عن عائشة قالت : كان رسول الله - صلى الله عليه وسلم - يتحفظ من شعبان ما لا يتحفظ من غيره

তিনি বলেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখতেন অন্য মাসের প্রতি এমনটি করতেন না। (আবু দাউদ, হাকেম, ইবনে হিব্বান, বায়হাকী , صحيح علي شرط المسلم)

শাবান মাসের মাসের রোজা রসূলের এত প্রিয় হওয়ার কারণ কি?

হাদীসের ব্যাখ্যাগ্রন্থসমূহে এর কয়েকটি কারণ উল্লেক করা হয়েছে-

এক: রমযানের সম্মানের কারণে তিনি সাবান মাসে রোজা রাখতেন।

اخرج الترمذی والبیھقی بسند ضعیف عن أنس قال سئل النبي صلى الله عليه وسلم أي الصوم أفضل بعد رمضان فقال شعبان لتعظيم رمضان

হযরত আনাছ রা. থেকে বর্ণি তিনি বলেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো যে, রমযানের রোযার পর কোন রোযা বেশী উত্তম? উত্তরে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, রমযানের সম্মানে শাবান মাসে রোযা রাখা। (বায়হাকী, তিরমিজী) (ত্বহাবী শরীফে এ সম্পর্কীয় আরো আলোচলা রয়েছে যা উক্ত হাদীসকে আরো শক্তিশালী করে।)

দুই.ঃসাথে সাথে রমযানের বিশেষ রহমত ও বরকতের প্রতি যেন আগ্রহ আরো বেড়ে যায় এবং রুহানী সম্পর্কটা যেন আরো দৃঢ় হয় এ জন্য শাবানে রোজা রাখা চাই, যেমন ফরজের পূর্বে নফলের ব্যাবস্থা রাখা হয়েছে ফরজের প্রতি মনোনিবেশ বৃদ্ধি করার জন্যে। (লাতাইফুল মাআরিফ, মাআরিফুল হাদীস)

 

তিন.ঃ নাসায়ী ও আবু দাঊদ শরীফে হযরত উসামা বিন যায়েদ রা. থেকে এ সম্পর্কে যে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে তা-ই সঠিক ও গ্রহণযোগ্য। হযরত উসামা বিন যায়েদ রা.বলেন একদা আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে  শাবান মাসে বেশী বেশী রোজা রাখার কারণ জিজ্ঞেস করলাম । তিনি উত্তরে বললেন, লোকেরা রজব ও রমযান এ দু’মাসের খুবই গুরুত্ব দেয় এবং রোজা রাখে; কিন্তু মধ্যবর্তী এ মাসটিকে (শাবান) উপেক্ষা করে চলে। অথচ এ মাসেই বান্দার আমলসমূহ আল্লাহর দরবারে উপস্থিত করা হয়। আর আমার কামনা হলো, আমার আমলসমূহ আল্লাহর দরবারে উপস্থাপন করার সময় আমি রোজা অবস্থায় থাকি। এ কারণেই আমি শাবান মাসে বেশী বেশী রোজা রাখি। (আবু দাঊদ নাসায়ী)

যেভাবে আমল উঠানো হয়:

বিশুদ্ধ হাদীসে মতে আমল উপস্থাপনের তিনটি স্তর রয়েছে যথা-

১. প্রতিদিন একবার আর তা হচ্ছে ফজর ও আসরের নামাজের পর। এটি মুসলিম শরীফের বর্ণনা।

২. প্রতি সপ্তাহে একবার প্রতি আর তা হচ্ছে সোমবারা ও বৃহঃপতিবারে। এটিও মুসলিম শরীফের বর্ণনা।

৩. আর প্রতি বছর একবার যা উপরে বর্ণিত হলো।(আবু দাঊদ নাসায়ী)

 কিছু কিছু বিশুদ্ধ হাদীসে অবশ্য এর বিপরীত মতও পাওয়া যে, অর্ধ শাবান চলে গেলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন যেমন: 

 أبي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا بقي نصف من شعبان فلا تصوموا قال أبو عيسى حديث أبي هريرة حديث حسن صحيح

হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন অর্ধশাবান চলে গেলে তোমরা আর রোযা রেখো না।

উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহ. বলেন, নিষেধ তাদের জন্য যারা শাবানে রোযা রাখার কারণে শারীরিক ও মানুষিক ভাবে দূর্বল হয়ে পরবে আর এ কারণে রমযানের রোযায় ব্যাঘাত ঘটবে। আর যাদের এমন হওয়ার সম্ভাবনা নাই তারা এ নিষেধের আওতায়ও পরে না। (উমদাতুল কারী)

শাবান মাসের দোয়া:

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাস আসলে এ দোয়া পড়তেন। দোয়াটি পড়া মোস্তাহাব।

 

 اللهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ وَشَعْبَانَ وَبَارِكْ لَنَا فِي رَمَضَانَ. وفي رواية غيره: ... وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ

فللمسلم أن يدعو بالدعاء المذكور، فهو من جملة الدعاء المشروع، وقد روى الإمام أحمد في المسند وغيره عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ـ رضي الله عنه ـ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ رَجَبٌ، قَالَ: اللهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ وَشَعْبَانَ وَبَارِكْ لَنَا فِي رَمَضَانَ. وفي رواية غيره: ... وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ. وإسناده ضعيف، كما قال الألباني والأناؤوط..

حديث: “اللهم بارك لنا في رجب وشعبان،وبلغنا رمضان”

رواه أبو نعيم في: “الحلية” (6/269) والطبراني في: “الأوسط”(4/189) والبزار –كما في: “كشف الستار”(961)-في آخرين من حديث زائدة بن أبي الرقاد ، عن زياد النميري ، عن أنس بن مالك قال : كان النبي صلى الله عليه وسلم إذا دخل رجب قال…فذكر الحديث.و الحديث مداره على زائدة بن أبي الرقاد عن زياد النميري،وهو من أفراده،قرَّره الحافظ البيهقي في:”شعب الإيمان”(3/375)، وقال الطبراني في: “المعجم الأوسط”(4/189) :”لا يُروى هذا الحديث عن النبي صلى الله عليه و سلم إلا بهذا الإسناد،تفرَّد به زائدة بن أبي الرقاد”انتهى.وزائدة قال عنه الحافظ ابن حجر في: “تقريب التهذيب”(ص/248-عوامة) : “زائدة بن أبي الرُّقاد،بضم الراء ثم القاف،الباهلي،أبو معاذ البصري الصيرفي،منكر الحديث،من الثامنة.س”انتهى.وقال أيضا في: “التقريب”(ص/255-عوامة) :”زياد بن عبدالله النُّميري البصري،ضعيف،من الخامسة.ت”انتهى. لذا قال الحافظ الهيثمي في [مجمع الزوائد (2/165) ]: “رواه البزار وفيه زائدة بن أبي الرقاد، قال البخاري: منكر الحديث وجهله جماعة”انتهى . وقال أيضا (3/140) : “رواه البزار والطبراني في الأسط ، وفيه زائدة بن أبي الرقاد، وفيه كلام وقد وُثّق “انتهى.وعليه: فسند الحديث ضعيف،قال الحافظ النووي في :”الأذكار ( ص 274):” ورُويِّنا في حلية الأولياء بإسناد فيه ضعف فذَكَرَه”انتهى.وقال الحافظ الذهبي في: “ميزان الإعتدال”(3/96) عنه: “ضعيف”انتهى.والحديث صالحٌ للتَّقوية،ومثلُه يُؤخَذ به في الفضائل؛لذا قال المحدث أحمد البنا الساعاتي في “بلوغ الأماني” (9/231): “وفي حديث الباب زياد النميري أيضا ضعيف ، وأورده السيوطي في الجامع الصغير وعزاه إلى للبيهقي في شعب الإيمان وابن عساكر ، وأشار إلى ضعفه ، وله طرق أخرى يقوي بعضها بعضا “انتهى.ثم قال في “بلوغ الأماني” (9/231) : “دعاء النبي صلى الله عليه وسلم بالبركة في هذه الأشهر الثلاثة يدل على فضلها . وفي تخصيص رمضان بالدعاء منفردا وعدم عطفه على رجب وشعبان دلالة على زيادة فضله”انتهى.

 

 

এবার আসা যাক শাবানের মধ্যরজনীর ফজিলত সম্পর্কে:

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বীদা হচ্ছে নেসফে শাবান তথা শাবানের মাসের মধ্যরজনী হচ্ছে ফজিলাতপূর্ণ একটি রাত। এ রাতের ফজিলত সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত। এবং এ রাতে আল্লাহ তাআলা নিচের আসমানে নেমে আসেন এটাও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বীদা। চলুন শবে বারাআতের ফজিলত সম্পর্কীয় হাদীসগুলো আমরা জেনে নেই।

১. মুসনাদে আহমদ-এ হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আছ রা. থেকে বর্ণিত-

 حديث عبد الله بن عمرو أن النبي صلى الله عليه وسلم قال:" يطلع الله عزّ و جلّ إلى خلقه ليلة النصف من شعبان فيغفر لعباده إلا لإثنين مشاحن و قاتل نفس " رواه أحمد برقم : 6353 ، وقال المحشي شعيب الأرنؤوط : صحيح بشواهده. وهو حديث حسن صحيح

 

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, শাবানের মধ্যরজনীতে আল্লাহ তাআলা তাঁর সৃষ্টির প্রতি বিশেষ করুণার দৃষ্টি প্রদান করেন এবং সকল বান্দাকে ক্ষমা করে দেন; কিন্তু দুই শ্রেণীর মানুষকে নয়, বিদ্বেষ পোষণকারী ও আত্মহত্যাকারীকে।

২. সুনানে ইবনে মাযাতে হযরত আবু মুসা আশয়ারী থেকে বর্ণিত:

حديث أبي موسى الأشعري أن النبي صلى الله عليه وسلم قال:" إن الله ليطلع في ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن ". أخرجه ابن ماجة، وقال الألباني: صحيح بمجموع الطرق

তিনি বলেন, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা শাবানের মধ্যরজনীতে রহমত ভরা দৃষ্টিতে গুনাহগারদের দিকে তাকান, ফলে সকল সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন, একমাত্র মুশরিক ও অন্য অন্যের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতিরেকে।

৩. অনুরূপভাবে আবু ছালাবাহ রা. থেকে বর্ণিত:

واخرج الطبراني والبيهقي من طريق مكحول عن ثعلبه الخشني رضي الله عنه
عن أبي ثعلبة الخشني ، عن النبي صلى الله عليه وسلم ، قال : « إذا كان ليلة النصف من شعبان اطلع الله إلى خلقه فيغفر للمؤمن ، ويملي للكافرين ، ويدع أهل الحقد بحقدهم حتى يدعوه _قال البيهقي وهو بين مكحول وابي ثعلبه مرسل جيد . تحقيق الألباني(حسن) انظر حديث رقم: 771 في صحيح الجامع رواه البيهقي في شعب الإيمان برقم : 3673 ، وفي السنن الصغرى برقم : 1458 ، و الطبراني في المعجم الكبير برقم : 590 و 593 ، وابن قانع في معجم الصحابة برقم: 264 (
 

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা স্বীয় বান্দাদের প্রতি শাবানের মধ্যরাতে  ক্ষমার দৃষ্টিতে তাকান, ফলে মুমিনদের ক্ষমা করে দেন এবং কাফিরদেরকে আরো আবকাশ দেন আর হিংসুকদেরকে তাদের হিংসার মাঝে ছেড়ে দেন, যতক্ষণ না তারা তাদের হিংসা বিদ্বেষ ত্যাগ করে।

 

৪. হযরত আবু বকর সিদ্দিক্ব রা. থেকে বর্ণিত:

أخرج البزار والبيهقي عن ابي بكر الصديق رضي الله عنه عن النبي قال
 ينزل الله الى السماء الدنيا ليله النصف من شعبان فيغفر لكل شىْ الا رجل مشرك او رجل في قلبه شحناء  
واسناده لابأس به كما قال الحافظ المنذري . وقال البزار وقد روى هذا الحديث اهل العلم واحتملوه

 رواه البيهقي في شعب الإيمان برقم : 3668 ، و البزار في مسنده برقم : 80 ، والديلمي في مسند الفردوس برقم : 8017 ، وقال الهيثمي : وفيه عبد الملك بن عبد الملك ذكره ابن أبي حاتم في الجرح والتعديل ولم يضعفه و بقية رجاله ثقات (مجمع الزوائد : 8/65  

তিনি বলেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন - নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা শাবানের মধ্যরাতে পৃথিবীর আকাশে অবতারণ করেন এবং পৃথিবীর সকল মানুষকে ক্ষমা করে দেন। একমাত্র কাফির এবং যার অন্তরে বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যক্তি ব্যতিরেকে।

৫. হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল রা. থেকে বর্ণিত:

 

عن معاذ بن جبل رضي الله عنه عن النبي قال :
 
يطلع الله الى جميع خلقه ليله النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه الا لمشرك او مشاحن  .
درجه الحديث : قال الحافظ الهيثمي في المجمع 8/ 65 رواه الطبراني في الكبير والاوسط ورجالهما ثقات .
قال محدث السلفيه الألباني المتناقض هو حديث صحيح لشواهده الكثير انظر تعليقه على رساله ليله النصف من شعبان .
وأخرجه ابن حبان في صحيحه ( الحسان بترتيب صحيح ابن حبان رواه البيهقي في شعب الإيمان (مجمع الزوائد : 8/65 ) برقم : 3674 ، و الطبراني في المعجم الكبير برقم : 215 ، وفي المعجم الأوسط برقم : 6967 ، وفي مسند الشاميين برقم : 198 و203 و 3497 والهيثمي في موارد الظمآن إلى زوائد ابن حبان : باب في

 

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- আল্লাহ তাআলা শাবানের মধ্য রজনীতে স্বীয় সৃষ্টির প্রতি বিশেষ করূণার দ্বার উন্মুক্ত করে দেন এবং সকল সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন শুধু মাত্র মুশরিক ও বিদ্বেষী ছাড়া।

 

 

৬. হযরত আউফ ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত

 

حدثنا أحمد بن منصور ، قال: أخبرنا أبو صالح الحراني يعني عبد الغفار بن داود ، قال: أخبرنا عبد الله بن لهيعة ، عن عبد الرحمن بن زياد بن أنعم ، عن عبادة بن نسي ، عن كثير بن مرة  عن عوف بن مالك رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: " يطلع الله تبارك وتعالى على خلقه ليلة النصف من شعبان، فيغفر لهم كلهم إلا لمشرك أو مشاحن
رواه و البزار في مسنده برقم : 2754 ، ابن أبي شيبة برقم : 30479 ، وعبد الرزاق في مصنفه برقم :7923 ، والبيهقي في شعب الإيمان برقم : 3672 ، وابن حجر في المطالب العالية برقم : 1133 ، وقال المنذرى (3/308) : رواه البيهقى وقال هذا مرسل جيد .

 

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- আল্লাহ তাআলা শাবানের মধ্য রজনীতে স্বীয় সৃষ্টির প্রতি বিশেষ করূণার দ্বার উন্মুক্ত করে দেন এবং সকল সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন শুধু মাত্র মুশরিক ও বিদ্বেষপোষণকারী ব্যতীত।

৭. হযরত আয়শা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

اخرج البيهقي عن العلاء بن الحرث ان عائشه رضي الله عنها قالت :

قام رسول الله -صلى الله عليه وسلم- من الليل فصلى فأطال السجود حتى ظننت أنه قد قبض ، فلما رأيت ذلك قمت حتى حركت إبهامه فتحرك فرجع ، فلما رفع رأسه من السجود وفرغ من صلاته قال : " يا عائشة أو يا حميراء أظننت أ ن النبي -صلى الله عليه وسلم- قد خاس بك؟ " قلت : لا والله يا رسول الله ولكني ظننت أن قبضت طول سجودك ، قال " أتدري أي ليلة هذه؟ " قلت : الله ورسوله أعلم ، قال : " هذه ليلة النصف من شعبان إن الله -عز وجل- يطلع على عباده في ليلة النصف من شعبان فيغفر للمستغفرين ويرحم المسترحمين ويؤخر أهل الحقد كما هم " ، رواه البيهقي . وقال : هذا مرسل جيد ويحتمل أن يكون العلاء أخذه من مكحول . قال الأزهري : يقال للرجل إذا غدر بصاحبه فلم يؤته حقه قد خاس به ، كذا في الترغيب والترهيب للحافظ المنذري .

قال البيهقي هذامرسل جيد ويحتمل ان يكون العلاء اخذه من مكحول.

 

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ রাতে নামায পড়ছিলেন এবং দীর্ঘসিজদার  কারণে আমি মনে করলাম যে, তিনি ইনতেকাল করেছেন। তাঁর অবস্থা জানার জন্য আমি তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি ধরে নাড়া দিলে তিনি নড়ে উঠেন তখন আমি পিছে আসি। অতঃপর নামায শেষ করে আমাকে বললেন, হে আয়েশা! হে হুমাইরা!  তুমি কি ধারণা করেছো আল্লাহর রাসূল কি তোমার সাথে কৃত ওয়াদা ভঙ্গ করেছে? আমি বললাম, আল্লঅহর শপথ করে বলছি, এ ধরণের কোন কিছু নয়; বরং সিজদায় আপনাকে দীর্ঘকাল অবস্থানের কারণে আমি মনে করেছি যে, আপনি ইনতেকাল করেছেন। এ কথা শুনে তিনি বললেন, তুমি কি জানো না যে আজকে কোন রজনী ? আমি বললাম, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। এরপর তিনি বললেন, আজ ‘শাবান মাসের পনের তারিখ। এ রাতে মহান রাব্বুল আলামীন ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন। রহমত প্রার্থনাকারীদের রহমত প্রদান করেন এবং বিদ্বেষীদের অবকাশ দেন।

৮. তিরমিযী শরীফে হযরত আয়েশা রা.এর আরো একটি বর্ণনা:

عن عروة عن عائشة قالت فقدت رسول الله صلى الله عليه وسلم ليلة فخرجت فإذا هو بالبقيع رافع رأسه إلى السماء فقال أكنت تخافين أن يحيف الله عليك ورسوله قلت يا رسول الله إني ظننت أنك أتيت بعض نسائك فقال إن الله عز وجل ينزل ليلة النصف من شعبان إلى السماء الدنيا فيغفر لأكثر من عدد شعر غنم كلب
سنن الترمذي: محمد بن عيسى بن سورة الترمذي. ط: دار الكتب العلمية. كتاب الصوم عن رسول الله الحديث بهذا اللفظ رواه أحمد (26018) ، والترمذي (736) ، وابن ماجه (1389

وقال صاحب إتحاف المسلم بزوائد أبي عيسى الترمذي على البخاري ومسلم اقول: سندہ ضعیف لانقطاعہ فی موضعین ولوجود الحجاج بن ارطاۃ وحالہ معروف غیر ان للحدیث شواھد یرتقی معھا لدرجۃ الحسن لغیرہ ذکر بعضھا المنذری فی الترغیب والترھیب والحدیث رواہ ابن ماجۃ رقم 1389 من ھذا الطریق۔

 

তিনি বলেন- ‘এক রজনীতে আমি প্রিয়নবীকে বিছানায় খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ফলে তাঁকে খোজার জন্য ঘর থেকে বের হয়ে পড়লাম। হঠাৎ দেখি তিনি জান্নাতুল বাক্বীতে আকাশের দিকে দু’হাত তুলে দিয়ে দোয়ারত আছেন। আমাকে দেখে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি কি এ ভয় করছো যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার প্রতি অন্যায় করবেন? আমি বললাম, অগো আল্লাহর রসূল! আমি ভেবেছিলাম আপনি হয়তো আপনার অন্য কোন স্ত্রীর গৃহে প্রবেশ করেছেন। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা শাবানের মধ্য রজনীতে প্রথম আকাশের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দান দেন এবং ’কালব’ গোত্রের ছাগলের পশমের চেয়েও অধিক পরিমাণ গুনাহগারকে ক্ষমা করেন।

একটি দুর্বল বর্ণায় এসেছে এ রাতে কাদের ক্ষমা করা হয় না:

 

يا عائشة‏!‏ اكنت تخافين ان يحيف ‏(‏يحيف‏:‏ الحيف‏:‏ الجور والظلم‏.‏ النهاية‏.‏ 1/469‏.‏ ب‏)‏ الله عليك ورسوله‏؟‏ بل اتاني جبريل فقال‏:‏ هذه الليلة ليلة النصف من شعبان، ولله فيها عتقاء من النار بعدد شعور غنم كلب، لا ينظر الله فيها الى مشرك ولا الى مشاحن ولا الى قاطع رحم ولا الى مسبل ‏(‏مسبل‏:‏ المسبل‏:‏ هو الذي يطول ثوبه ويرسله الى الارض اذا مشى‏.‏ وانما يفعل ذلك كبرا واختيالا‏.‏ النهاية‏.‏ 2/339‏.‏ ب‏)‏ ولا الى عاق لوالديه ولا الى مدمن خمر‏.‏ ‏(‏ للبيهقي في شعب الإيمان وضعفه – عن عائشة‏)‏‏ رواه البيهقي في شعب الإيمان برقم: 3678 وقال : هذا إسناد ضعيف وروي من وجه آخر.

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রা. বলেন: হে আয়েশা! তুমি কি ভেবেছো , আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার প্রতি অন্যায় করবেন? বরং জিবরীল আমীন আমার কাছে এসে বললেন এটি শাবান মাসের মধ্যরাত। আল্লাহ তাআলা এ রাতে বনূ কালব গোত্রের সমস্ত ভেড়ার লোমের সমসংখ্যক মানুষকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করে দেন। তবে আল্লাহ তাআলা মাফ করেন না মূর্তি পূজারীদেরকে, অন্যের প্রতি অন্তরে বিদ্বেষভাব পোষণকারীদেরকে, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীদেরকে, পায়ের গোড়ালির নিচে কাপড় পরিধানকারীদেরকে, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তানদেরকে, অথবা মদ্যপায়ীদেরকে।

৯. হযরত উসমান ইবনে আবিল আস রা. থেকে বর্ণিত

وروى البيهقي في "شعب الإيمان" عن عثمان بن أبي العاص رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وآله وسلم، قال: «إذا كان ليلة النصف من شعبان نادى مناد: هل من مستغفر فأغفر له، هل من سائل فأعطيه؟ فلا يسأل أحد شيئًا إلا أعطي، إلا زانية بفرجها، أو مشرك

». تخريج السيوطي (هب) تحقيق الألباني(ضعيف) انظر حديث رقم: 653 في ضعيف الجامع.

তিনি বলেন শাবান মাসের মধ্যরাত আসলে একজন আহব্বানকারী আহব্বান করে- কোন ক্ষমাপ্রার্থী  আছো কি? যাকে আমি ক্ষমা করে দেব!, কোন প্রার্থী আছো কি যাকে আমি তার চাহিদা পূরা করবো। সে রাতে যে যা চায় তাকে তাই দেয়া হবে শুধু লজ্জাস্থান দ্বারা ব্যভিচারকারী ও মুশরিককে ছাড়া।

১০.হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত :

عن  أبى هريرة رضى الله عنه ، عن النبي صلى الله عليه وسلم قال : « إذا كان ليلةُ النصفِ من شعبانَ يغفرُ اللهُ لعبادِهِ إلا لمُشركٍ أو مُشَاحِنٍ » أخرجه البزار كما فى كشف الأستار (2/435 رقم 2045) . قال الهيثمى (8/65) : فيه هشام بن عبد الرحمن ، ولم أعرفه ، وبقية رجاله ثقات . والخطيب (14/285)

اخرجه الخطيب في تاريخ بغداد: ج 14 ص 285بسند أخبرني عبد العزيز بن علي الأزجي، حدثنا عبيد الله بن أحمد بن علي المقرئ، حدثنا محمد بن مخلد، حدثنا يعقوب بن إسحاق القلوسي.
وأخبرنا القاضي أبو عمر القاسم بن جعفر بن عبد الواحد الهاشمي، حدثنا أبو بشر عيسى بن إبراهيم بن عيسى الصيدلاني، حدثنا أبو يوسف القلوسي، حدثنا عبد الله بن غالب العبداني، حدثنا هشام بن عبد الرحمن الكوفي - وقال الصيدلاني هشام ابن عبد الملك لعله ابن عبد الرحمن الكوفي، وقدم علينا مرابطا، ثم اتفقا - عن الأعمش عن أبي صالح عن أبي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ليلة النصف من شعبان يغفر الله لعباده إلا لمشرك أو لعبد مشاحن فاالحديث حسن

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- আল্লাহ তাআলা শাবানের মধ্য রজনীতে তাঁর বান্দাদের ক্ষমা করে দেন শুধু মাত্র মুশরিক ও বিদ্বেষীকে ছাড়া।

সার কথা  এ রাতের ফজিলত সম্পর্কে অনেক সহীহ হাদীস বণির্ত হয়েছে যা কারো অস্বীকার করার সাধ্য নাই। তাই যারা এ রাতের ফজিলতকে অস্বীকার করেন তারা প্রকারান্তরে হাদীস অস্বীকারকারীদের দলভুক্ত বলে গন্য হবে বলে আমার সুদৃঢ় বিশ্বাস।

এ দলের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে আমরা আল্লাহর কাছে পানাহ চাই।

এ রাতের ফজিল সম্পর্কে আল্লামা মোবরকপুরীর রায়:

পাক-ভারত উপমহাদেশের অন্যতম হাদীস বিশারদ , প্রখ্যাত আহলে হাদীস আল্লামা আব্দুর রহমান মোবারকপুরী রহ. তার তিরমিযী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘তোহফাতুল আহ্ওয়াজী’তে বলেন-

اعلم أنه قد ورد في فضيلة ليلة النصف من شعبان عدة أحاديث مجموعها يدل على أن لها أصلا… فهذه الأحاديث بمجموعها حجة على من زعم أنه لم يثبت في فضيلة ليلة النصف من شعبان شيء، والله تعالى أعلم . (تحفة الأحوذي: محمد بن عبد الرحمن بن عبد الرحيم المباركفوري , ط: دار الكتب العلمية، كتاب الصوم عن رسول الله صلى الله عليه وسلم ، باب ما جاء في ليلة النصف من شعبان )

 

সবার স্মরণ রাখা দরকার যে, শাবানের মধ্যরাতের (শবে বারাআত) ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে, সব হাদিস একত্রিত করলে প্রমাাণিত হয় যে, এ রাতের ফজিলতের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য প্রমাণ রয়েছে। অনুরূপভাবে এ হাদিসগুলো সম্মিলিতভাবে তাদের বিপক্ষে প্রমাণ বহন করে যারা ধারণা করে যে, শবে বারাআতের ফজিলতের ক্ষেত্রে কোন প্রমাণ মেলে না।’’

পনের শাবানের রোযা:

পনের শাবানের রোযার হাদীসটা ‘যাইফ’। অনেকে এটা জাল হাদীস মনে করে থাকেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুহাদ্দিসীনেকেরামদেরন নিকট হাদীসটি যাইফ। কারণ ইবনে মাজাহ গ্রন্থে যে সমস্ত জাল হাদীস রয়েছে সে লিষ্টে এ হাদীসটি নেই বিধায় বোঝা যায় এটি যাইফ হাদীস। আল্লাহ বদরূদ্দীন আইনী রহ.ও এটাকে যাইফ বলেছেন। আল্লামা সুয়ূতী রহ. বলেন হাফেজ মুনজিরী রহ. এ হাদীসটিকে তার কিতাব আত-তারগীব ওয়াত তারহীবের বর্ণনা করেছেন। আর তিনি কখনও কোন জাল হাদীস তার কেতাবে বর্ণনা করেন না বিধায় নির্দিধায় এটা গ্রহণ করা যেতে পারে। মাউসু আতুল ফিকহিয়্যাতে (কুয়েত) বর্ণনা করেছেন যে, জুমহুর ফুকুহায়ে কেরাম এ দিনটিতে রোজা রাখাকে মুস্তাহাব মনে করেন।

হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত

 

علي بن أبي طالب قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا نهارها فإن الله ينزل فيها لغروب الشمس إلى سماء الدنيا فيقول ألا من مستغفر لي فأغفر له ألا مسترزق فأرزقه ألا مبتلى فأعافيه ألا كذا ألا كذا حتى يطلع الفجر.

سنن ابن ماجه: محمد بن يزيد القزويني. ط: المكتبة العلمية. كتاب إقامة الصلاة والسنة فيها ، باب ما جاء في ليلة النصف من شعبان, باب ما جاء في ليلة النصف من شعبان .

 

তিনি বলেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন যখন শাবানের মধ্য রজনী উপস্থিত হবে, তখন তোমরা এ রাতে ইবাদত  কর এবং আগত দিনটিকে রোযা রেখ। কেননা আল্লাহ তাআলা ওই রাতের সূর্যাস্তের পর নীচ আসমানে নেমে আসেন এবং এ ঘোষণা করেন ঃ আছ কি কেউ ক্ষমা চাওয়ার? তাকে ক্ষমা করবো। আছ কি কেউ রিযিক প্রার্থনা করার? রিযিক দ্বারা ধন্য করবো। আছ কি কেউ অসুস্থ ? তাকে আরোগ্য দান করবো। আছ কি এমন কেউ? আছে কি এমন কেউ? সুবহে সাদেক উদিত হওয়া পর্যন্ত এভাবে  আহব্বান করা হয়।

পাঁচ রাতে দোয়া কবূল হয়:

قال الشافعي : وبلغنا أنه كان يقال : إن الدعاء يستجاب في خمس ليال في ليلة الجمعة ، وليلة الأضحى ، وليلة الفطر ، وأول ليلة من رجب ، وليلة النصف من شعبان. قال الشافعي : وأنا أستحب كل ما حكيت في هذه الليالي من غير أن يكون فرضا .

الأم:محمد بن إدريس الشافعي، ط: دار المعرفة, سنة النشر: 1410هـ/1990م. كتاب الصلاة , كتاب صلاة العيدين » العبادة ليلة العيدين

 

ইমাম শাফীঈ রহ. বলেন আমাদের নিকট এ সংবাদ পৌঁছেছে যে, বলা হয়ে থাকে, পাঁচটি রহমতময় রজনীতে দো‘আ কবুল হয়। জুমার রাতে, ঈদুল আযহার রাতে, ঈদুল ফিতরের রাতে, রজব মাসের প্রথম রাতে এবং শাবানের মধ্যরাতে। তিনি (শাফে‘ঈ) আরও বলেন, ‘আমি উপরোক্ত রাতগুলোকে উদ্যাপন করা মুসতাহাব মনে করি, যদি ফরজ মনে করা না হয়,

এ রাতে যা বর্জীয় , শরীয়তে নিষিদ্ধ ও বেদআত:

১.আতশবাজি করা।২. পটকা ফোটানো।৩. ইবাদত-বন্দেগি বাদ দিয়ে খামাখা ঘোরাঘুরি করা।৪.অযাচিত আনন্দ-উল্লাস করা।৫. বেহুদা কথাবার্তা ও বেপরোয়া আচরণ করা।৬. অন্য কারও ইবাদতের বা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানো।৭.  হালুয়া-রুটি বা খাবারদাবারের পেছনে সময় ব্যায় করা। ৮.নারী ও পুরুষ এক সাথে গোসল করা ।৯.মাসজিদ আলোক সজ্জায়-সজ্জিত করা ।১০.বাড়িঘর ও কবরস্থান মোমবাতি ও আগরবাতি জ্বালানো ।১১. এ রাতের বিশেষ কোন নামাজ নেই। তাই বিশেষ বিশেষ সংখ্যায় ও পদ্ধতিতে নামাজ পড়া ১২. মিলাদ পড়া।১৩. দল বেধে কবরস্থান ও মাজারে যাওয়া।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আনুষ্ঠানিকতা ও দলবদ্ধতা ব্যতিরেকে একাকীভাবে  এরাতে যথাসম্ভব পরিমানে নফল নামাজ,জিকির আজকার,দরূদ এস্তেগফার,কোরআন তেলাওয়াত করা যাবে কেননা তা সকল রাত্রের জন্য সুন্নত সম্মত আমল।এমনিভাবে দলবদ্ধতা ব্যতিরেকে একাকীভাবে  এ রাতে কবর জিয়ারত করা যেতে পারে।

হে আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফীক দান কর। আমীন।


প্রসঙ্গ: প্রবন্ধ মন্তব্য: 0


আপনার মন্তব্য লিখুন


Graveter Image

নাম

April 12