বিস্তারিত

ইসলামী বিচার-ব্যবস্থা- হুদুদ ,কেসাস ও দণ্ডবিধি

মাওলানা মুফতী আব্দুল আহাদ 01 সেপ্টেম্বর

আপরাধের সাজা ও শাস্তিকেই আমরা দণ্ডবিধি বলি। মৃত্যদণ্ড থেকে শুরু করে জেল-জরিমানা যত প্রকার সাজা আছে আমরা ঢালাওভাবে সবগুলোকেই দণ্ডবিধি বলে থাকি। আসলে আপরাধ সম্পর্কিত সবশাস্তিকে দণ্ডবিধি বলে অভিহিত করা কুরআন-সুন্নার শিক্ষা নয়। একজন মুসলমানের এব্যাপারে কতটুকু জ্ঞান রাখা দরকার; আসুন একটু জেনে নেই।

ইসলামী শরীয়তে অপরাধের শাস্তিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

 (ক) হুদুদ

(খ) কেসাস

(গ) তাযীরাত অর্থাৎ, দণ্ডবিধি।

 আপরাধের দ্বারা পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি হয়, মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়  এবং আল্লাহর নাফরমানী হয়। সব রকম অপরাধের সাথেই হক্কুল্লাহ ( আল্লাহর হক) এবং হক্কুল এবাদ ( বান্দার হক) উভয়টিই বিদ্যমান থাকে। কিন্ত কোন কোন অপারাধে আল্লাহ হক আবার কোন কোন অপরাধে বান্দার হক প্রবল থাকে এবং এ প্রাবল্যের উপর ভিত্তি করেই ইসলামী শরীয়তে বিধি-বিধান রচিত হয়েছে।

 (১) যে সমস্ত আপরাধে আল্লাহর হকের পরিমাণ প্রবল ধরা হয়েছে, সেগুলোর শাস্তিকে শরীয়তের পরিভাষায় এক বচনে হদ আর বহুবচনে হুদুদ বলা হয়। হুদুদ মাত্র পাঁচটি

(১) ডাকাতির শাস্তি।

(২) চুরির শাস্তি।

(৩) ব্যভিচার বা যিনার শাস্তি।

(৪) ব্যভিচারের আপবাদের শাস্তি।

(৫)  মদ্যপানের শাস্তি।

* ডাকাতির শাস্তি।

(ক) ডাকাত দল; মালও লুন্ঠন করেছে, হত্যাও করেছে, তাহলে তাদের ফাঁসি দেওয়া হবে।

(খ) শুধু হত্যা করেছে মাল লুন্ঠন করেনি, তাহলে তাদের হত্যা করা হবে।

(ঘ) হত্যা করেনি শুধু মাল লুন্ঠন করেছে, তাহলে তাদের বিপরীত দিক থেকে হস্তপদসমূহ কেটে দেওয়া হবে।

(ঙ) হত্যাও করেনি মালও লুন্ঠন করেনি বরং মানুষদের শুধু ভয়-ভিতি দেখায়, তাদের নির্বাসন বা জেলখানায় বন্দি করে রাখা হবে।

* চুরির শাস্তি। ডান হাত গিঁঠ থেকে কর্তন করা।

* ব্যভিচার কারীরা যদি অবিবাহিত হয়, তাহলে একশত বেত্রাঘাত, আর যদি বিবাহিত হয়, তাহলে  প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করা।

* ব্যভিচারের আপবাদের শাস্তি। আশিটি বেত্রাঘাত।

* মদ্যপানের শাস্তি। আশিটি বেত্রাঘাত।

(২) আর, যে সমস্ত আপরাধে বান্দার হককে শরীয়তের বিচারে প্রবল ধরা হয়েছে সেগুলোর শাস্তিকে বলা হয় কেসাস। শরীয়তের  পরিভাষায় কেসাস বলাহয়, হত্যা এবং আঘাতের সে শাস্তিকে, যা সমতা ও পরিমাণের প্রতি লক্ষ্য রেখে বিধান করা হয়।

(৩) উল্লিখিত দুইপ্রকার আপরাধ ছাড়া অবশিষ্ট অপরাধসমূহের শাস্তির কোন পরিমাণ নির্ধারণ করেনি; বরং বিচারকের বিবেক-বিবেচনা ও তার অভিমতের উপর ছেড়ে দিয়েছে । এমন আপরাধ সম্পর্কিত শাস্তিকেই শরীয়তের পরিভাষায় তাযীরাত বা দ-বিধি বলাহয়।

 দ-গত শাস্তিকে লঘু থেকে লঘুতর, কঠোর থেকে কঠোরতর এবং ক্ষমাও করা যায়। এব্যাপারে বিচারকদের ক্ষমতা অত্যন্ত ব্যাপক। কিন্তু হুদুদের বেলায় কোন সরকার , শাসনকর্তা  অথবা বিচারকই সামন্যতম পরিবর্তন , লঘু অথবা  কঠোর করার অধীকার রাখেনা। স্থান ও কাল ভেদেও এতে কোন পার্থক্য হয় না এবং কোন শাসক ও বিচারক তা ক্ষমাও  করতে পারে না।

 সারকথা, কোরআন পাক যেসব অপরাধের শাস্তিকে আল্লাহর হক হিসেবে নির্ধারণ করে জারি করেছে, সেসব শাস্তিকে হুদুদ বলে এবং যেসব শাস্তিকে বান্দার হক হিসেবে জারি করা হয়েছে সেগুলোকে কেসাস বলা হয়। পক্ষান্তরে যেসব অপরাধের শাস্তি নির্ধারণ করেনি , সেজাতীয় শাস্তিকে বলা হয়, তযীর বা দণ্ড । শরীয়তের এসমস্ত শাস্তি সম্পর্কে অনেকেই বেখবর। আর এগুলোর সাথে ঈমানেরও যথেষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। হুদুদ সম্পর্কে আপনার ধারণা যদি পরিস্কার না থাকে, তাহলে মহান আল্লাহ পাকের বিধানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন কি ভাবে? কেউ কারো বিরুদ্ধে একটা মিথ্যা কথা বললেই আমরা সেটাকে আপবাদ বলে আখ্যায়ীত করি। আসলে এটাত অপবাদ নয়, মিথ্যা কথা, যা কবিরা গুনাহ। আর  অপবাদ হচ্ছে অমার্জনীয় অপরাধ, যা ক্ষমা যোগ্য নয়। হে আল্লাহ! আমাদের বোঝার তাওফীক দান কর। আমীন।  

 

 


প্রসঙ্গ: প্রবন্ধ মন্তব্য: 0


আপনার মন্তব্য লিখুন


Graveter Image

নাম

April 12