বিস্তারিত

মৃত ব্যক্তির বাড়িতে দাওয়াত খাওয়া প্রসঙ্গেঃ

মাওলানা মুফতী আব্দুল আহাদ 23 সেপ্টেম্বর

মৃত ব্যক্তির বাড়িতে দাওয়াত খাওয়া প্রসঙ্গেঃ

আমাদের সমাজে একটা প্রথা আছে, তা হচ্ছে, কোন ব্যক্তি মারা গেলে তার জানাযায় উপস্থিত লোকদের এ ভাবে দাওয়াত দেয়া হয়যে, অমুক তারিখে মাইয়্যেতের বাড়িতে ইসালে ছাওয়াব ও দোয়া অনুষ্ঠিত হবে, সকলের প্রতি দাওয়াত রইল।

 মৃতব্যক্তির বাড়িতে খানার ব্যাবস্থা করা ও খানা খাওয়া বেদআত, এ ব্যাপারে উম্মতের উলামায়ে কেরাম একমত। বিভিন্ন কারণে এমন অনুষ্ঠান অবৈধ ও হারাম।

(১) এ সমস্ত রছম-রেওয়াজের কোন অস্তিত্ব ইসলামে নেই এগুলো জাহিলিয়াতের যুগে আরবের মুর্খ লোকেরা করে থাকত।

 ইসলাম এসে এ সমস্ত জাহিলী প্রথাকে রহিত করে দিয়েছে।

(২) সাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে সালেহীনদের থেকে এমন কোন আমলের প্রমাণ পাওয়া যায় না।

(৩) এটা যারা করে তাদের এটা মনগড়া কাম।

(৪)

عن أبي هريرة رضى الله تعالى عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال إذا مات الإنسان انقطع عمله إلا من ثلاث صدقة جارية وعلم ينتفع به وولد صالح يدعو له . أخرجه مُسلم .

হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম বলেন- কোন ব্যক্তি যখন মারা যায় তখন তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তিনটি আমল ব্যতিত।

(অর্থাৎ, তিনটি আমলের ছাওয়াব সে মারা যাওয়ার পরেও পাবে)

(১) সাদাকায়ে জারিয়া। অর্থাৎ, মৃত ব্যক্তি যদি কোন স্থায়ী দান-খয়রাত করে থাকে, তাহলে সেগুলোর সাওয়াব সে পাবে।

(২) তার হায়াতে মানুষদের যে দ্বীনী ইলম শিক্ষা দিয়েছে, এবং সে অনুযায়ী মানুষেরা এখনও আমল করে- এগুলোর সাওয়াব সে পাবে।

(৩) সে এমন নেক সন্তান রেখে গেছে, যে তার জন্যে দোয়া কেরে- এমন নেক ছেলের দোয়ার সাওয়াব সে পাবে।

( সহীস মুসলিম)

 (৫) খানাটা যদি ইছালে ছাওয়াবের নিয়তেই হত তাহলে মৃত ব্যক্তির আত্মিয় স্বজনরা গরীব ও মিসকিনদেরকেই শুধু দাওয়াত করে খাওয়াত, কারণ গরীব-মিসকীনদের খানা খাওয়ানোর ব্যাপারে হাদীস ও কোরআন মাজীদে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। যা বড় সাওয়াবের কাজ। কিন্তু আমাদের সমাজে পুরোটাই উল্টো, কারণ এসমস্ত দাওয়াতের খানা গরীবদের কপালে খুব কমই জোটে, বরং ধনীরাই তা ভোগ করে থাকে।

(৬) এটা নিছক মানুষ দেখানোর জন্যে করা হয়। কারণ খানা না খাওয়ালে মানুষে নানা রকমের কথা-বার্তা বলবে তাই। যদি ছাওয়াবেই আশা হত তাহলে গরীব-মিসকীনদের মাঝে নগদ টাকা-পয়সা গুপনে বিলিয়ে দিত কারণ গরীব মানুষ খানার চেয়ে টাকার মোহতাজ বেশী।

(৭) عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الْبَجَلِيِّ قَالَ كُنَّا نَعُدُّ الِاجْتِمَاعَ إِلَى أَهْلِ الْمَيِّتِ وَصَنِيعَةَ الطَّعَامِ بَعْدَ دَفْنِهِ مِنْ النِّيَاحَةِ

অর্থ, সাহাবায়ে কেরামদের বর্ণনা- আমরা মৃৃত ব্যক্তির কাছে কান্না-কাটি করাকে যেমন মন্দ কাজ মনে করতাম, তেমনি মৃত ব্যক্তির বাড়িতে খানা ইত্যাদির জন্যে জমায়েত হওয়াটাকেও মন্দ কাজ বলে মনে করতাম।

(৮)

ويكره اتخاذ الضيافة من الطعام من أهل الميت، لانه شرع في السرور لا في الشرور وهي بدعة مستقبحة.

 

  দাওয়াতের খানা ত শুধু খুশীর সময়টাতেই হয়, দুঃখ ও মুছীবাতের সময় আবার দাওয়াত কিসের। ইসলাম ত এমন দাওয়াতের পক্ষে না। বিধায় মানুষ মারা গেলে মৃত ব্যক্তির বাড়িতে যে দাওয়াতী খানার ব্যাবস্থা করা হয়, তা অত্যন্ত মন্দ কাজ, যা ইসলাম সমর্থন করে না। ফতুয়ায়ে শামী।

 তাই যে সমস্ত ব্যক্তিরা এ সমস্ত কাজকে সমর্থন করে, অবশ্যই এর পেছনে তাদের কোন অসৎ উদ্দেশ্য আছে, তাই তারা তাদের অসৎ উদ্দেশ্যকে সফল করার লক্ষ্যে, এমন মন্দ কাজ যেগুলোকে ইসলাম সমর্থন করে না, সেগুলোকে বৈধ বানানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত। হে আল্লাহ! আমাদের সঠিক পথ দেখাও।   


প্রসঙ্গ: প্রবন্ধ মন্তব্য: 0


আপনার মন্তব্য লিখুন


Graveter Image

নাম

April 12