বিস্তারিত

সাহরী খাওয়ার শেষ সময়সীমা:

মাওলানা মুফতী আব্দুল আহাদ 24 নভেম্বর

সাহরী খাওয়ার শেষ সময়সীমা:
........................................
একটি ভ্রান্তি নিরসন
.......................
নিম্নে বর্ণিত হাদীসটির কারণে অনেকের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হয় এবং বলতে শোনা যায় যে, ফজরের আযানের পরেও সাহরী খাওয়া অনুমতি রয়েছে হাদীসে এবং দলীল স্বরূপ তারা এ হাদীসটি পেশ করে  থাকেন:
عن أبي هريرة  رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا سمع أحدكم النـداء والإناء على يده فلا يضعه حتى يقضي حاجته مـنه ) صحيح أبي داؤد(
অর্থ: হযরত আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সা. ইরশাদ করেছেনে যখন তোমরা কেউ আযান শুনবে আর খাদ্যের পাত্র হাতে থাকে, তবে সে যেন তা রেখে না দেয় যে পর্যন্ত সে  তা হতে নিজের প্রয়োজন পূর্ণ না করে। (আবু দাউদ)
উক্ত হাদীসের কারণে অনেকেই মনে করেন, ফজরের আযানের পরেও সাহরী খাওয়া যায়।
আসলে এমন ধারণা করা আর হাতির দাঁতকে কলাগাছ মনে করা সমান। কারণ সাহরীর সময়সীমার বর্ণনা এসেছে সরাসরি কোরআন মাজীদে ইরশাদ হচ্ছে:
وَكُلُوا وَاشرَبُوا حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الخَيطُ الأبيَضُ مِنَ الخَيطِ الأسوَدِ مِنَ الفَجرِ
অর্থ: আর পানাহার কর যতক্ষণ না  কালো রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিস্কার দেখা যায়। (সুরা বাকারা; ১৮৭)
উক্ত আয়াতে  রাতের অন্ধকারকে কালো রেখা এবং  ভোরের আলো ফোটাকে সাদা রেখার সাথে তুলনা করে  রোযার শুরু এবং খানা-পিনা হারাম হওয়ার সঠিক সময়টি বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। অধিকন্তু  এ সময়সীমার মধ্যে বেশ-কম হওয়ার সম্ভাবনা যাতে না থাকে সেজন্য
حَتَّى يَتَبَيَّنَ  শব্দটি যোগ করে দেয়া হয়েছে।এতে সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে,সন্দেহপ্রবণ লোকদের ন্যায় সুবহে সাদেক দেখা দেয়ার আগেই খানা-পিনা হারাম মনে করো না অথবা এমন অসাবধানতাও অবলম্বন করো না যে, সুবহে সাদেকের আলো ফুটে উঠার পরও খানা-পিনা করতে থাকবে। বরং খানা-পিনা এবং রোযার মধ্যে সুবহে সাদেকের উদয় সঠিকভাবে নির্ণয়ই হচ্ছে সীমারেখা। এ সীমারেখা উদয় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত খানা-পিনা বন্ধ করা জরুরী মনে করা যেমন জায়েয নয়, তেমনি সুবহে সাদেক উদয় হওয়ার ব্যাপারে একীন হয়ে যাওয়ার পর খানা-পিনা করাও হারাম এবং রোযা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণ যদিও তা এক মিনিটের জন্য হয়। বিধায় সুবহে সাদেক উদয় সম্পর্কে একীন হওয়া পর্যন্তই সেহরীর শেষ সময়।
সার কথা আয়াতের তাফসীর থেকে পরিস্কার বোঝা যায় যে, সাহরীর শেষ সময় সুবহে সাদেক উদয় হওয়ার আগ পর্যন্ত। সুবহে সাদেক উদয় হওয়ার পর আর খানা-পিনার কোন অনুমতি নেই। যেহেতু সুবহে সাদেক উদিত হওয়ার সাথে সাথেই সাহরীর সময় শেষ হয়ে যায় এজন্যে ফজরের আযানের সাথে সাহরীর সম্পৃক্ততারও কোন কারণ নেই কেননা ফজরের আযান শুরু হয় সুবহে সাদেকের পর। তবে হাঁ, রসূল সা. এর যুগে হযরত হযরত বেলাল রা. সুবহে সাদেকের পূর্বেই আযান দিতেন, যেমন উক্ত আয়াতের তাফসীরে এর বর্ণনা পাওয়া যায়, যেমন:
روى سالم بن عبد الله بن عمر عن أبيه رضي الله عنه أن بلالا كان يؤذن بليل ، وفي رواية قال لا يغرنكم أذان بلال عن السحور فإنه يؤذن بليل
অর্থ: বেলাল সুবহে সাদেকের পূবেই আযান দেয়, অপর এক বর্ণনায় এসেছে বেলালের আযান তোমাদের সাহরী খাওয়া থেকে যেন বিরত না রাখে কেননা সে, সুবহে সাদেক হওয়ার  আগেই আযান দেয়। (বোখারী ও মুসলিম)
আর এ আযান শুনে অনেকে খানা-পিনা থেকে বিরত থাকতেন এবং মনে করতেন আযানের পর খানা-পিনা করা হারাম এ জন্যে রসূল সা. বলেন বেলালের আযান যেনো তোমাদের সাহরী খাওয়া থেকে বিরত না রাখে। (তাফসীরে কুরতুবী খ ১; পৃ ৬৯৪)
বোঝা যায় উল্লিখিত হাদীসে আযানের পরেও যে খানা-পিনার অনুমতির কথা এসেছে তা হচ্ছে বেলালে আযানের পর। সুবহে সাদেক উদিত হওয়ার পর উম্মে মাকতুম রা. যে আযান দিতেন সে আযান কে বুঝানো হয়নি। বিধায় কেউ যদি এমনটি মনে করে থাকে যে, সুবহে সাদেকের পর যে আযানা হয় তারপরও সাহরী খাওয়ার অনুমিত হাদীসে রয়েছে তাহলে তার এ বুঝ হবে কোরআন বিরোধী। কারণ পনিত্র কোরআনে সাহরীর সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে যার বর্ণনা আমরা উপরে পেয়েছি।

ফজর ও আসরের নামাজের পর আর
 কোন নামাজ নেই....  

৫৮৬ –حدثنا عبد العزيز بن عبد الله قال حدثنا إبراهيم بن سعد عن صالح عن ابن شهاب قال أخبرني عطاء بن يزيد الجندعي أنه سمع أبا سعيد الخدري يقول سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول لا صلاة بعد الصبح حتى ترتفع الشمس ولا صلاة بعد العصر حتى تغيب الشمس
 অর্থ: হযরত আবু ছাঈদ  খুদরী রা. বলেন, রসুল সা. বলেছেন,  ফজরের নামাজের পর আর কোন নামাজ নেই  যতক্ষণ না সূর্য কিছু উপরে উঠে যায় এবং আসরের নামাজের পরও কোন নামাজ নেই  যতক্ষণ সূর্য সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যায়। বোখারী ও মুসলিম

 


প্রসঙ্গ: প্রবন্ধ মন্তব্য: 0


আপনার মন্তব্য লিখুন


Graveter Image

নাম

April 12